রোজা রেখে রক্তদান এবং এফেরেসিস
Author: রক্তবন্ধু | 27 Apr 2021
রক্তদানে রোজা ভাঙ্গে না। এর অনেক দলীল আছে৷ তবুও অনেকে শঙ্কিত বা দ্বিধায় থাকেন। আপনারা চাইলে YouTube এও অনেক ভিডিও দেখতে পারেন। সৌদি স্কলার, ইসলামিক এক্সপার্ট, ড. জাকির নায়েক, ড. মিজানুর রহমান আযহারী, কওমী, আলিয়া সহ অসংখ্য বিখ্যাত ওলামায়ে কেরামগণের মাসআলা শুনতে পাবেন। এই ভিডিওতে মোটামুটি সব তথ্য আছে৷ (লেখাটি পড়ার পাশাপাশি videoটি শুনুন)
রোজা রেখে রক্তদান করা যায় এতে রোজা ভেঙে যায় না বা রোজার কোন ক্ষতি হয় না। তবে প্লাটিলেট / প্লাজমা দিলে অর্থাৎ এফেরেসিস করালে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (বিস্তারিত শেষাংশে)
রোজা রেখে রক্তদানের পর কোন কারনে ‘একান্তই রোজা ভেঙে ফেলতে হলে’ কিংবা রক্তদানের পূর্বে একান্তই অন্য কোন ডোনার না পেলে দিনের বেলাতেই জরুরি হলে এবং ডাক্তার রোজা ভাঙতে “বাধ্য” করালে, রক্তদানের পর কোন কারণে রক্তদাতা দুর্বল হয়ে পরলে রোজা ভাঙ্গার অনুমতি আছে । তবে এক্ষেত্রে পরবর্তীতে রমজানের পরে সুবিধাজনক সময়ে রোজার কাজা আদায় করে নিতে হবে।
মনে রাখবেন, কাজা মানে ১টার বদলে ১টা রোজা, কাফফারা না।
অন্য সময়ে কেউ “ইচ্ছাকৃত” রোজা ভাঙ্গলে বা রোজা না দিলে কাফফারা দিতে হয়। কাজা আর কাফফারা এর বিস্তর পার্থক্য আছে। আলেমের কাছে জেনে নিন।
কোন কোন হাদিস বিশারদ, বিশেষজ্ঞ আলেম মনে করেন, এককাপ পরিমান রক্ত বের হলে রোজা ভেঙে যাবে, তবে ব্লাড টেস্ট করার স্যাম্পল পরিমানে রক্ত নিলে রোজা ভাঙবে না। যেহেতু মাক্বাসেদে শারী’আ অনুযায়ী হিফযুন নাস অর্থাৎ জীবন বাঁচানো ফরজ, সময় মতো রক্ত না দিলে যদি রোগী মারা যাবার সম্ভাবনা থাকে তবে সুযোগ হলে অবশ্যই রক্তদান করতে হবে। পরবর্তীতে এই রোজা আদায় করে নিতে হবে। এবং এজন্য অনেক অনেক সওয়াব পাওয়া যাবে। অর্থাৎ জীবন রক্ষার প্রশ্নে রোজা ভেঙে রক্তদানও অধিক পূণ্যের কাজ৷
এছাড়াও ফতোয়ার কিতাব আহসানুল ফাতাওয়াতে এসেছে,
❝রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত দিলে রোজা ভাঙবে না। তবে কেউ যদি শারীরিকভাবে এমন দুর্বল হয় যে, রক্ত দিলে সে রোজা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলবে- তাহলে তার জন্য রক্ত দেওয়া মাকরুহ। -আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৪৩৫❞
আপনার যেটিকে বিশুদ্ধ মত মনে হয় সেটার যে কোন একটার উপর আমল করতে পারেন।
ইসলামটা সহজ, সহজ ভাবে নিন।
মোট কথা, রোজা রেখে রক্তদানের তিনটা মাস’আলা রয়েছে।
১. যদি রোজাদারের ক্ষতি না হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে রোজা অবস্থায় রক্তদান করা যাবে। এতে রোজা ভাঙবে না। রোজার কোন ক্ষতি বা সমস্যা হবে না।
রোজা রেখে রক্তদান করে দুর্বল কিংবা অসুস্থ হয়ে পরলে রোজা মাকরুহ হবে, তবে ভাঙবে না।
২. রক্তদানের জন্য কেউ চাইলে বা প্রয়োজন হলে রোজা ভাংতে পারবেন। অর্থাৎ রোজা ভাঙ্গার অনুমতি আছে।
রক্তদাতা চাইলে রোজা নাও ভাংতে পারেন। রক্তদানের প্রয়োজনে সিয়াম ভঙ্গ করলে অর্থাৎ রোজা ছেড়ে দিলে পরবর্তীতে ঈদের পর ঐ রোজা অবশ্যই কাজা আদায় করতে হবে। এর জন্য কাফফারা দিতে হবে না।
৩. একদল আলেম মনে করেন রোজা অবস্থায় রক্তদান করলে অবশ্যই রোজা ভেঙে যাবে। তবে পরবর্তীতে (ঈদের পর) যতো দ্রুত সম্ভব কাজা আদায় করে নিতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না।
আপনি যে কোন একটি পরামর্শ বা মতকে গ্রহণ করতে পারেন।
রমযান মাস পরবর্তীতে রোজা আদায় করা সাধারণত অনেকেরই অলসতায় হয়ে ওঠে না। যদি সাওম বা রোজা ভেঙ্গে ফেলেন, রোজা ভেঙ্গে জীবন বাঁচানোর সওয়াব পাবেন। তাই বলে রোজা মাফ হয়ে যাবে না। অবশ্যই রোজার কাজা আদায় করে নিতে হবে।
যদি রোগীর অবস্থা খুব একটা খারাপ না হয় অর্থাৎ দিনের বেলা না দিয়ে রাতে বা ইফতারের পর রক্ত দিলে চলবে সেক্ষেত্রে বিশুদ্ধ উত্তম মতামত হলো ইফতারের পরই রক্তদান করুন। রোগীর জীবন সঙ্কটাপন্ন হলে রোজা অবস্থায় রক্তদানের প্রয়োজন দেখা দিলে আপনি উপরোক্ত যে কোন একটি মত আপনার বিশ্বাস অনুযায়ী গ্রহণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা আপনার রয়েছে।
তবে প্লাটিলেট দিলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
রোজা অবস্থায় প্লাটিলেট দেয়া যাবে না। রোজা ভেঙ্গে প্লাটিলেট দিতে হবে। শুধু তাই নয়, একেবারে খালি পেটে এমনিতেও প্লাটিলেট দেয়া ঠিক না। এতে ডোনার অজ্ঞান হয়ে পরার আশঙ্কা থাকে।
প্লাটিলেট দেওয়ার সময় প্রতিবার ২৫০ মি.লি. রক্ত মেশিনে যাবার পর প্লাটিলেট আলাদা হয়ে অবশিষ্ট হোল ব্লাড আবার শরীরে প্রবেশ করে। রোজা ভঙ্গের এটি একটি কারণ। এ প্রক্রিয়ায় রক্তদাতার পুনঃপুনঃ রক্ত গ্রহণ হয়। আমরা জানি যে রক্ত গ্রহণ করলে ইফতার হয়ে যাবে অর্থাৎ রোজা ত্যাগ বা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
এছাড়াও প্লাটিলেট এফেরেসিস চলাকালীন রক্ত ডোনারের শরীরে পুশব্যক হওয়ার সময় কিছু নরমাল স্যালাইনও প্রবেশ করে, এটিও রোজা ভঙ্গের একটি কারণ।
এফেরেসিস এর মাধ্যমে প্লাজমা নেয়া হলেও একই ভাবে (প্লাটিলেট ডোনেট এর মতো) রোজা ভেঙ্গে যাবে।
এফেরেসিস খুব জরুরি হলে রোজা ভাংতে হবে, পরবর্তীতে কাজা আদায় করে নিতে হবে।
রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক না হলে ইফতারের পর এফেরেসিস করতে হবে।
এফেরেসিস এর মাধ্যমে রক্তের কোন অংশ ডোনেট করলে নিঃসন্দেহে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
এফেরেসিস প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে হলে Click
ভিডিও কার্টেসীঃ Universal Vision
অন্যান্য পোস্ট সমূহ
কীভাবে বুঝবেন রক্তশূন্যতায় ভুগছেন?
Author: রক্তবন্ধু | 19 Mar 2024
কীভাবে বুঝবেন রক্তশূন্যতায় ভুগছেন? আপাত দৃষ্টিতে রক্তশূন্যতাকে খুব বড় কোনো রোগ বলে মনে না হলেও, যে কোনো বড় অসুখের শুরু হতে পারে এই রক্তশূন্যতা...
প্রসঙ্গঃ ডেঙ্গু ও প্লাটিলেট
Author: রক্তবন্ধু | 26 Jul 2023
দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এতে মৃত্যুর তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের সব রেকর্ড। বিশেষজ্ঞরা...
Polycythemia: রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যখন অস্বাভাবিক বেড়ে যায়
Author: রক্তবন্ধু | 02 Jul 2023
Polycythemia: রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যখন অস্বাভাবিক বেড়ে যায় Poly অর্থ অনেক, বহু। রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমান স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে গেলে, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বহুগুণে...