প্লাটিলেট
Author: রক্তবন্ধু | 04 Jul 2021

প্রথমেই আপনাকে স্বাগত জানাই বাংলাদেশের প্রথম প্লাটিলেট সংক্রান্ত, প্লাটিলেট ডোনারদের নিয়ে সাজানো রক্তবন্ধু ওয়েবসাইটে।
প্লাটিলেট এবং এফেরেসিস পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা পেতে আশা করছি ধৈর্য সহকারে পুরো লেখাটি বুঝে পড়বেন।
রক্তে অনেক উপাদান থাকে। প্লাটিলেট রক্তের একটা উপাদান মাত্র।
প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ কণিকা, যা রক্ত জমাট বাঁধার জন্য জরুরি। রক্তে স্বাভাবিক প্লাটিলেটের সংখ্যা হলো প্রতি ঘন মিমি রক্তে দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। নানা কারণেই এর সংখ্যা কমে আসতে পারে, আর তখন রক্তক্ষরণের ঝুঁকি যায় বেড়ে। যেমন প্লাটিলেট এক লাখের কম হলে অস্ত্রোপচার না করারই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেননা কাটা-ছেঁড়া হলে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা কঠিন হয়। প্লাটিলেট ২০ হাজারের নিচে নেমে এলে কোনো আঘাত ছাড়াই রক্তক্ষরণ হতে পারে, যেমন নাক বা দাঁতের মাড়িতে রক্তপাত, মলের সঙ্গে রক্ত ইত্যাদি। প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে চলে গেলে দেহের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন অন্ত্র, মস্তিষ্ক, কিডনিতে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
এফেরেসিস এর সুবিধাঃ
সনাতন পদ্ধতিতে সাধারনত ৪জন ডোনার থেকে ১ ব্যাগ প্লাটিলেট সংগ্রহ করা হয়, কিন্তু এখন উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে ১জন ডোনার থেকেই ১ব্যাগ প্লাটিলেট বের করা যায়। যে জন্য এফেরেসিস মেশিন বা প্লাটিলেট মেশিন দ্বারা এক জন ডোনারের কাছ থেকে ২৫০ মিলির মতো ব্লাড নিয়ে মেশিনে প্রসেসিং করে প্লাটিলেট বের করে ব্লাডের বাকী অংশটুকু আবার ডোনারের শরীরে পুশ ব্যাক করে দেয়। এই ভাবে ৬/৭বার করে। প্রতি ধাপে ১০-১৫মি সময় লাগে। মোট ১ ঘন্টা বা ১ ঘন্টা ১৫-২০মি সময় লাগে।
(বিদ্রঃ মেশিন ভেদে সিস্টেম সামান্য একটু আলাদা হয়)
শুধু প্লাটিলেট দিলে ১০-১৫ দিন পর আবার সে প্লাটিলেট দিতে পারে, কারন অণুচক্রিকা ছাড়া অন্য কিছু নেয়া হয়না। আর অণুচক্রিকার জীবনকাল ৫-৯দিন যা ৯ দিনেই শরীরে ব্যাক করে। আরও একটা ব্যাপার হল ১ জন প্লাটিলেট ডোনার একাই ৪ জন ডোনারের কাজ করছে। এতে বাকী ৩ জন ডোনার অন্য রোগী কে বাচাঁতে পারবে।
আর অল্প সময় পরেই সেই রক্তদাতারা আবার প্রস্তুত হতে পারছে অন্য রোগীর জন্য । যেখানে ৪ জনের কাছ থেকে রক্ত নিলে ঐ ৪ জন আগামী চার মাস রক্তদান করতে পারবে না। আবার ৪ জন ম্যানেজ করাও কঠিন। আর শুধু প্লাটিলেট নিলে ঐ প্লাটিলেটদাতা কিছুদিন (১৫দিন থেকে ১ মাস) পরেই আবার প্লাটিলেট দিতে পারবেন। এমনকি প্রয়োজন হলে হোল ব্লাডও দিতে পারবে।
এতে করে অল্পসংখ্যক ডোনার দিয়ে বেশি সংখ্যক রোগীরও উপাকার করা সম্ভব হচ্ছে।
তাহলে কেন এফেরেসিস করাবেন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
ব্যস্ত শহরে রক্তদাতাই যেখানে পাওয়া কঠিন, সেখানে খরচ একটু বেশি হলেও ৪ জনের জায়গায় ১ জন থেকে প্লাটিলেট নেয়া সহজ নয় কি? ধরুন কোন রোগীর দুই ইউনিট প্লাটিলেট লাগবে। যদি দুইজন প্লাটিলেটদাতা হয় তবেই যথেষ্ট। আর সনাতন পদ্ধতিতে হোল ব্লাড থেকে প্লাটিলেট আলাদা করে দিতে হলে লাগবে ৮ জন রক্তদাতা! এছাড়াও ৪ জন থেকে যে প্লাটিলেট পাওয়া যায়, আধুনিক মেশিনের সাহায্যে ১জন থেকে শুধু প্লাটিলেট নিলে তার চেয়ে ভালো পরিমানে প্লাটিলেট পাওয়া যায়। মেশিনের সাহায্যে শুধু প্লাটিলেট সংগ্রহ করা হয় বলে প্লাটিলেট কাউন্ট অনেক বেশি থাকে।
কাদের প্লাটিলেট প্রয়োজন হয়?
সাধারণত ডেঙ্গুরোগে আক্রান্তদের, ক্যান্সারের রোগীদের শুধু প্লাটিলেট বেশি লাগে৷ অনেক সময় বয়ষ্ক মানুষদেরও প্রয়োজন হয়। শুধু প্লাটিলেট এফেরেসিস মেশিন আছে এমন নির্দিষ্ট কিছু হাসপাতাল ছাড়া সবখানে দেয়া যায় না।
কতোদিন পরপর প্লাটিলেট দেয়া যায়?
(i) শুধু প্লাটিলেট দেয়ার ১৫-২০ দিন পর পুনরায় শুধু প্লাটিলেট কিংবা পুরো ব্যাগ রক্ত দিতে পারবেন।
(ii) একবার whole blood অর্থাৎ পুরো ব্যাগ (৪৫০ মি.লি) রক্ত দিলে, আবার ৪ মাস পর রক্ত দিতে পারবেন। এবং শুধু প্লাটিলেট দিতে হলেও এক্ষেত্রে ৪ মাস বা ১২০ দিনই অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ একবার হোল ব্লাড দিলেই কমপক্ষে ১২০ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
(iii) যদি শুধুই প্লাটিলেট দেন, তবে ১৫-২০ দিন বা ১ মাস পরপর দিতে পারবেন।
- শুধু প্লাটিলেট দাতাদের আমরা মাসে একবার প্লাটিলেট দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
খরচঃ শুধু প্লাটিলেট টানাতে খরচ একটু বেশি হলেও সুবিধা গুলো উপরে আলোচনা করা হয়েছে। প্রাইভেট হাসপাতালে খরচ তুলনামূলক একটু বেশি। আজ এই লেখা পর্যন্ত পিজি(বঙ্গবন্ধু), ঢাকা মেডিকেল, জাতীয় হৃদরোগ এসব জায়গায় খরচ ১৩,৭০০ টাকা। ভাগ্য ভালো হলে যদি সরকারি ভর্তুকির কীট থাকে ৩,১৫০ টাকাতেও এই সেবা পেতে পারেন। রেডক্রিসেন্টে ১৬,৪০০ টাকার মতো লাগে। থ্যলাসেমিয়া সমিতি হাসপাতালে রোগীভেদে ১৪-১৬ হাজার টাকা লাগে। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে সাধারণত ৩০-৩২ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। (৪ জুলাই, ২০২১)
প্লাটিলেট ডোনারের যোগ্যতাঃ বয়স কমপক্ষে ১৮, ওজন ৬০ কেজি ও ভেইন বা রগ স্পষ্ট/ তুলনামূলক মোটা হতে হবে।
হিমোগ্লোবিন কমপক্ষে ১২.৫ ও প্লাটিলেট কাউন্ট ন্যূনতম ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) থেকে ২,২০,০০০ (দুই লক্ষ বিশ হাজার) হতে হবে। যা হাসপাতালে চেক করে নেয়া হবে।

এফেরেসিস মেশিন
Tips: রক্তে প্লাটিলেট কাউন্ট বাড়াতে পেঁপের জুস খেতে পারেন। এছাড়াও বেদানা, ডালিম, আনার, পালংশাক, ডাব, দুধ, ব্রোকলি, মিষ্টি কুমড়া, গাজর রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কিসমিস প্লাটিলেটের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে। তিলের তেল ও রসুন প্লাটিলেট এর মান উন্নত করে। পাশাপাশি রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে খেতে পারেন কচু শাক, কচুর লতি, কচুর মুখী (সজি)।
Note: যারা শুধু প্লাটিলেট/অণুচক্রিকা প্রদান করেন আমরা জানি ১৫ দিন পরপর প্লাটিলেট দেয়া যায়। কিন্তু আমাদের আবহাওয়া পরিবেশ ও খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণের ভিত্তিতে মাসে ১ বার দেয়াই উত্তম। সে হিসেবে রক্তবন্ধুতে ৩০ দিন পরপর প্লাটিলেট দিতে প্রস্তুত প্লাটিলেট দাতাদের লিস্টে দেখানো হবে। ৩০ দিনের কম হলে নাম কাটা দেখা যাবে বা প্রস্তুত প্লাটিলেটদাতা হিসেবে দেখানো হবে না। তবে কারো শরীর স্বাস্থ্য ভালো হলে, CBC রিপোর্ট ভালো হলে এবং খুব জরুরী রোগীর ক্ষেত্রে ১৫-২০ দিন পরই চাইলে আপনারা প্লাটিলেট দিতে পারেন। ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশাল ও চট্টগ্রাম এর বাইরে যেহেতু এফেরেসিস এর মাধ্যমে শুধু প্লাটিলেট দেয়ার সুযোগ নেই তাই এই জেলাগুলোতে যারা আছেন, প্লাটিলেট ডোনার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করবেন না। আশেপাশের জেলার যারা এইসব লোকেশনে প্লাটিলেট দিতে পারবেন তারাও রেজিস্ট্রেশন করুন। প্রতিবার প্লাটিলেট দেয়ার পর লগইন করে তারিখ আপডেট করে দিবেন।
অন্যকোন জেলায় এফেরেসিস মেশিনের মাধ্যমে শুধু প্লাটিলেট/অণুচক্রিকা নেয়ার ব্যবস্থা চালু হলে আমাদের জানাবেন, আমরা সেই জেলা যুক্ত করে দিবো।
Update Note: 10 Oct 2022 ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এফেরেসিস চালু হয়।
Update: 25 Sep 2023: বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এফেরেসিস মেশিন দিয়ে ডোনেট এর শুভ উদ্বোধন হয়েছে।
প্লাটিলেট ডোনারগণ রেজিস্ট্রেশন করুন
roktobondhu.com/platelet
– রক্তবন্ধু
৪ জুলাই, ২০২১।
অন্যান্য পোস্ট সমূহ

Diego
Author: রক্তবন্ধু | 07 Nov 2024
ডিয়েগো ব্লাড গ্রুপ এর নাম শুনেছেন কেউ? রক্তের গ্রুপের (ব্যাতিক্রম এন্টিজেনের) শেষ নাই! আমরা আসলে মেজর ABO সিস্টেমে বাকী গুলো "গোনায়" ধরি না! যদিও...

কীভাবে বুঝবেন রক্তশূন্যতায় ভুগছেন?
Author: রক্তবন্ধু | 19 Mar 2024
কীভাবে বুঝবেন রক্তশূন্যতায় ভুগছেন? আপাত দৃষ্টিতে রক্তশূন্যতাকে খুব বড় কোনো রোগ বলে মনে না হলেও, যে কোনো বড় অসুখের শুরু হতে পারে এই রক্তশূন্যতা...

প্রসঙ্গঃ ডেঙ্গু ও প্লাটিলেট
Author: রক্তবন্ধু | 26 Jul 2023
দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এতে মৃত্যুর তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের সব রেকর্ড। বিশেষজ্ঞরা...
Facebook Comments