প্রথম রক্তদানেই হৃদয় দান

শেয়ার করুন:

প্রথম রক্তদানেই হৃদয় দান

 

ঘটনাটা কোন জায়গা থেকে শুরু করব বুঝতেছি না।

আজকে (কিছুদিন আগে) এক ভাই আমার ফেসবুক স্টোরিতে  শাড়ীর বিজ্ঞাপন দেখে ইনবক্সে নক করেছিলেন শাড়ি নেওয়ার জন্য।

কিছুক্ষণ শাড়ি সংক্রান্ত কথোপকথন শেষ হলে কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে আবারও ম্যাসেজ দিলেন। বললেন, ❝ইরফান ভাই, কিছু না মনে করলে আপনাকে একটা কথা বলতে পারি?❞

উত্তরে আমি বললাম, হ্যাঁ অবশ্যই।

উনি বললেন ২০২০ সালে আপনার রেফারেন্সে ময়মনসিংহে একজন রোগীকে ব্লাড দিয়েছিলাম।

তখন উপরের ম্যাসেজ স্ক্রল করে দেখলাম আসলেই আমার রেফারেন্সে উনি একজনকে ব্লাড দিয়েছিলেন। পরে আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেন ভাই কিছু হয়েছে?

উনি বললেন- না ভাই, কিছু হয়নি তবে আপনি আমার অনেক বড় উপকার করেছেন।

বললাম কীভাবে?

উত্তরে উনি যা বললেন, আমি পুরাই থ।

জানালেন ❝ভাই, আমি তো সেই মেয়েকে বিয়ে করে ফেলছি!❞

বলেন কি ভাই?!
– হ্যাঁ ভাই, সত্যি।

উনি তখন বিস্তারিত বলা শুরু করলেন।

২০২০ সালের জুন মাসের ২৩ তারিখে আপনার রেফারেন্সে সাবিনা (আপু) কে ব্লাড দিলাম। উনার ঘাড়ে একটা অপারেশন করতে হয়েছিলো। সেটাই ছিলো আমার জীবনের প্রথম রক্তদান।
আর আমার ব্লাড গ্রুপও কিন্তু রেয়ার, এবি নেগেটিভ।

সাবিনা (বর্তমানে আমার স্ত্রী) অপারেশন করার পর সুস্থ্য হয়ে বাড়ি গেলে তার বাবা নিয়মিত আমার খোঁজখবর নিতেন।

একদিন ওনাদের বাড়িতে আমাকে দাওয়াত দিলে আমিও কি যেন মনে করে চলে গেলাম। যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। তারা আমাকে সেদিন আর আসতে দিলেন না।

তাদের বাড়িতে রাত থেকে গেলাম। রাতে সবার সাথে গল্প গুজব করে পরের দিন সকাল বেলা চলে আসি।

তার বাবা মাঝে মধ্যে আমাকে ফোন দিত। আমিও মাঝেমধ্যে ফোন দিতাম। কোন কোন সময় ফোনটা রিসিভ করতো সাবিনা।
একদিন আমি তাকে হুট করে বলেই ফেললাম আপনার পার্সোনাল নাম্বারটা দিন।
উনি আমাকে উনার পার্সোনাল ফোন নাম্বারটা দিলেন। এভাবে কিছুদিন চলতে চলতে আমি একদিন হুট করে তাকে প্রোপোজ করে বসি।
দুইদিন পরে তিনি আমার প্রোপোজাল একসেপ্ট করেন এবং আমরা রিলেশনশিপে চলে যাই।

এই রিলেশনশিপ আমাদের দীর্ঘ এক বছর ধরে চলে। এই এক বছরে আমরা শুধু ফোনেই কথা বলেছি, কারো সাথে আর দেখা করি নি। এছাড়াও তাদের বাড়ি ছিল জামালপুর আর আমার বাড়ি ময়মনসিংহ ভালুকায়। দূরত্ব মোটামুটি অনেক।
পরে আমি বাড়িতে আমার ঘটনা খুলে বলি যেন তাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়।

পরে আমার বাবা-মা তাদের বাড়িতে আমাদের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তার বাবা-মা আমাদের বাড়িতে এসে দেখে যান।
দুই পরিবারের সমঝোতায় ২০২১ সালের জুন মাসে ২৫ তারিখে আমাদের বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয় রক্তবন্ধুর উছিলায় প্রথম রক্তদানের মাধ্যমে।

আমার নামটাই তো বলা হলো না !
আমি মহিউদ্দিন মাহমুদ।
আজকে সেই সাবিনার শাড়ির জন্যই আপনাকে নক করেছিলাম!

প্রথম রক্তদানেই হৃদয় দান || ইরফান পাঠান


শেয়ার করুন:

Facebook Comments