ইচ্ছে পূরণ ও প্রথম প্লাটিলেট দানের গল্প

শেয়ার করুন:

প্রথমবার প্লাটিলেট দানের গল্প, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি

ইচ্ছে ছিলো অনেক দিন থেকেই প্লাটিলেট দেয়ার। প্লাটিলেট ডোনেট এর ছবি দেখি ফেইসবুকে। এই জিনিসটার অভিজ্ঞতা নিতে আমারও ইচ্ছে হয়। অবশ্য ঢাকার বাইরের প্রতিটি রক্তদাতার আগ্রহ থাকে এফেরেসিস প্লাটিলেট এর ব্যাপারে। তবে ঢাকা তো যাওয়া হচ্ছিল না। আমার বাড়ি পঞ্চগড়ে, পড়াশোনা করি পাশের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে।
বাবা গাজীপুরে থাকেন চাকুরি সুবাদে। আব্বু হঠাৎ ৪ তারিখে অসুস্থ হয়ে পরেন। হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। আমি ৫ তারিখে গাজীপুরের উদ্দেশ্য রওনা দেই। ৭ এবং ৮ তারিখে ইরফান ভাই ও ফারুক ভাই সহ আমাদের ঢাকার রক্তবন্ধুর স্বেচ্ছাসেবী বড় ভাইদের বলি ৯ তারিখে একটা বি পজিটিভ প্লাটিলেট রোগী খুঁজে দেওয়ার জন্য। আর ঐ বিশেষ দিনটি ছিলো আমার ছোট বোনের জন্মদিন। আমি নিজেও আমার ওয়ালে এবং রক্তবন্ধু গ্রুপে প্লাটিলেট লাগবে এমন রোগীর খোঁজ চেয়ে পোস্ট করেছিলাম। ৮ তারিখ রাতে ইরফান ভাইয়া একটা রোগীকে আমার নম্বর দেন। রোগীর লোক আমাকে রাতে ফোন দিয়ে বলেছিলো যে, ভাই আগামীকাল সকালে আপনাকে ফোন দিবো। আমার এতোই আগ্রহ ছিলো যে উনি ফোন দেওয়ার আগেই আমি সকালে উঠে নিজেই তাকে ফোন করি। উনি বললেন -আপনি আসেন। তখনো আমার আব্বু গাজীপুরে একটি হাসপাতালে ভর্তি। আমি আব্বুকে বলি একজন অসুস্থ ছোট বাচ্চাকে প্লাটিলেট দিতে হবে। আব্বু অসুস্থ শরীর নিয়ে আর কিছুই বলেন নাই। শুধু বলেছিলেন- ❝যাও বাবা, দেখে শুনে যাইয়ো।❞ আমি গাজীপুর থেকে রওনা হলাম শ্যামলীর উদ্দেশ্যে। তবে ঐ দিন আর দেওয়া হয় নাই। আমি এতোকষ্ট করে গেলাম অথচ রোগীর লোক পরে সারাদিন আর ফোনই ধরে নাই! তাই সেদিন ঘুরে চলে এসেছি।
অন্য রোগীর খবরও পাওয়া যাচ্ছিলো না। তারপর আমাদের রক্তবন্ধুর বড় ভাই যারা ঢাকায় থাকেন আবারও তাদেরকে জানাই। উনারা অনেক চেষ্টা করেন রোগী খুঁজে দেওয়ার জন্য।
অবশেষে ১২ তারিখ হঠাৎ দুপুর দুইটার সময় একজন লোক ফোন দেয়। তার সাড়ে তিন বছরের ক্যান্সারে আক্রান্ত ছোট বাচ্চার প্লাটিলেট কমে গেছে। বললেন ❝ভাই, আপনি আসলে খুব উপকার হয়।❞ উনাকে বলি আমার যেতে প্রায় ৩ ঘন্টা সময় লাগবে। উনি আমাকে শ্যামলী শিশু হাসপাতালে আসতে বললেন। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে মহাখালীর বাস ধরে মহাখালী পর্যন্ত যাই। এর মাঝে উনারা অনেক বার আমাকে ফোন দেন। মহাখালী পৌঁছেই আমি উনাদের ফোন দেই। উনারা জানালেন বিকেল হয়ে গেছে, শিশু হাসপাতালে দিতে সমস্যা হবে। তাই দ্রুত জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট হাসপাতালে যেতে বললেন।
পাঠাও এর একটা বাইক নিয়ে দ্রুত জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে চলে যাই। সব টেস্ট করানোর পর ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট অপেক্ষা করলাম। তারপর আমার ডাক আসলো। জীবনের নতুন একটা অভিজ্ঞতা হল!
প্রায় ১ঘন্টা ১৫ মিনিট সময় লাগলো প্লাটিলেট দিতে।
বলতে পারেন জীবনের একটি ইচ্ছে বা স্বপ্ন পূরন হলো। এফেরেসিস চলাকালে আমার অনেক আনন্দ লাগছিলো যা আমি ভাষায় বলে প্রকাশ করতে পারবো না।
যত দিন বেঁচে আছি এভাবেই যেন অসহায় মানুষের পাশে থাকতে পারি। (১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২)

আবু হাসান বাবু
রক্তবন্ধুর একজন স্বেচ্ছাসেবী ও নিয়মিত বি পজিটিভ রক্তদাতা।

৬ বার হোল ব্লাড ও ১ বার প্লাটিলেট।

শুধুমাত্র স্বেচ্ছায় রক্তদাতাগণ রেজিস্ট্রেশন করবেন।


শেয়ার করুন:

Facebook Comments