হিমাংশুর রক্তদান

শেয়ার করুন:

হিমাংশু আমার কেউ ছিল না। আব্বা মারা যাওয়ার আগের দিন সে হুট করে আব্বাকে রক্ত দিতে এসেছিলো। আমার আব্বা আট বছর বয়সে তাঁর মা কে হারিয়েছিলেন। আব্বাকে আমার আবেগহীন মনে হতো। কখনই তাঁর মা বা বাবাকে স্মরণ করে তাঁকে কাঁদতে দেখিনি কিন্তু আমার মা মারা যাওয়ার পর আব্বা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন , তোকে দেখে আমি বুঝতে পারি মা হারানোটা কতটা কষ্টের!

এগুলো আসলে মানুষের খুব একান্ত কষ্ট। মানুষ কাউকেই এই কষ্ট গুলো বলতে পছন্দ করেনা বলেই মানুষ কে অনেক আবেগহীন প্রাণী মনে হতে পারে। হিমাংশুকেও আমার তেমনি মনে হয়েছিলো।

আমি আজ নিজে হিমাংশু হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে করতে বুঝতে পারি কেনো সেদিন সে আমাকে বলেছিলো , ভাই , কাইন্দা কাইটা লাভ নাই। দুনিয়াতে আপনার কান্দনের দাম নাই কিন্তু বিপদের সময়ে রক্তের দাম আছে। দুনিয়া কাঁপিয়ে হাসতে হাসতে সে বলেছিলো, ভাই আজকে আমার কিছু টাকার দরকার ছিল, বাচ্চাটা না খেয়ে আছে , যান, আপনের আব্বারে এই রক্তটা আমি ফ্রিই দিয়া দিলাম। অনেক সাধলেও সেদিন তাকে আমি কোনো টাকাই দিতে পারিনি।

হিমাংশু আজও আমার কাছে একটা নীরব রহস্যের নাম যে অপরিচিত লোকের সামনে প্রকাশ্যে জোরসে হাসতে পারতো। আমিও পারি তবে হিমাংশু আর আমার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে হিমাংশু কাঁদতেও জানতো।  যাওয়ার সময় হাতটা ধরে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলেছিলো, ❝আমার বাবার O-ve রক্ত ছিলো, দরকারের সময়ে পাইনি। মানুষের রক্ত লাগলেই আমি তাই ছুটে আসি, আমার বাবার জন্য দোয়া করিস ভাই।❞ আমি হিমাংশুর মত কাঁদতে পারিনা। কান্না এলেও আমার হাসতেই ইচ্ছে হয়। খামোখাই হাসি। এই হাসিটা খারাপ। অনেক খারাপ।


শেয়ার করুন:

Facebook Comments