শিক্ষকের অনুপ্রেরণা, শিক্ষার্থীর রক্তদান

শেয়ার করুন:

কিছুটা হলেও সফল
এখানেই জীবনের সার্থকতা!!

একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক হিসেবে চাকুরির সুবাদে প্রতি তিন মাস পর পরই নতুন নতুন প্রশিক্ষনার্থীদের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাই।

আমাদের ইন্সটিটিউটে মোট ৫টি ট্রেড রয়েছে, প্রতি ট্রেডের ন্যায় আমার ট্রেডে ও ৪০-৫০জন প্রশিক্ষণার্থী থাকেন। তাদের কে নিয়েই তিন মাস ক্লাস করি।

দুটি শিফটে ক্লাস পরিচালনা হয় প্রতি শিফটে পাঁচ ঘন্টা করে সময় থাকে।

আমি একজন নিয়মিত রক্তদাতা

তাই প্রতিদিন ক্লাসের শেষ অংশের দিকে তাদের সাথে ৫/১০ মিনিট করে রক্তদানে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বেচ্ছায় রক্তদানের আহ্বানে কথা বলার চেষ্টা করি থাকি। আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমার প্রতিটি স্টুডেন্ট ১৮ বছরের বেশি বয়সী হওয়াতে যথেষ্ট পরিমানে রেসপন্স পাই এবং সফলও হই।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক অনেক নিয়মিত রক্তদাতা আছে যাদের রক্তদানের গল্পের শুরুটা এখান থেকেই হয়েছে !!

২০১৯ সালের আগস্ট মাসের এমনই কোন একদিন ক্লাসে ঢুকেই বি+ রক্তের সন্ধান করছিলাম, দুজন কে পেয়েও গিয়েছিলাম। কিন্তু সিলেট থেকে আসা একজন রোগীর জন্য মোট ৬ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন ছিল, ওপেন হার্ট সার্জারীর রোগী ছিলেন। কিছুটা নিশ্চুপ হয়ে যখন চেয়ারে বসে ফেইসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে রক্তদাতা খুঁজছিলাম তখনই ক্লাসের সবচেয়ে সহজ সরল পিচ্চি মেয়েটা বলে উঠেছিল “স্যার আমি রক্তদিবো, দিতে পারবো তো?” আমি আগে থেকেই জানতাম সে দিতে পারবে না তবুও তার জবাবে বলছিলাম সক্ষমতা থাকলে দিতে পারবে!!

জানার চেষ্টা করি নতুন করে ,তখন সে পলিটেকনিকের ডিপ্লোমা ২য় বর্ষের ছাত্রী বয়সটা (সম্ভবত 17+) ওজন ও ৪৬ কি ৪৭ হবে। যখন বললাম তুমি তো দিতে পারবে না, তখন তার কিছুটা মন খারাপ হয়েছিল। সান্ত্বনা দিতে বলেছিলাম ভাল করে খাওয়া দাওয়া করো স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়ালী হও। ওজন বাড়াতে হবে আর ১৮ বছর পূর্ণ হলেই রক্তদান করা শুরু করবে !

তিন-চার দিন আগে মেয়েটা হঠাৎ করে আমাকে মেসেঞ্জার বক্সে বার্তা পাঠায় ❝ময়মনসিংহে কারো বি+ লাগলে আমাকে বলিয়েন , আগে পিচ্চি ছিলাম তাই দিতে পারতাম না এখন কোন সমস্যা নাই❞

রমজানে সুমাইয়ার প্রথম রক্তদান (২০২১)

এই রামাদ্বানের মধ্যে রক্তদানের পথে যাত্রা শুরু, আল্লাহ কবুল করুক তোর এই দান কে। বারাকাল্লাহু ফি হাইয়্যাতি।

ওহ আচ্ছা, আমার ছাত্রীর নাম সুমাইয়া আক্তার।
আজ ময়মনসিংহ আল কেমি হসপিটালে একজন সিজারিয়ান মহিলাকে দিয়ে নিজের জীবনের প্রথম রক্তান সম্পন্ন করলো। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।

হ্যাপি ব্লাড ডোনেটিং

শিব্বির আহমেদ


শেয়ার করুন:

Facebook Comments