রোগীর পোলারে ধরে ফেল!

শেয়ার করুন:

উন্নত বহির্বিশ্বে এমনিতেই সবাই রক্তদান করে। এমনকি অনেক জায়গায় এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রক্তদানে যেতে হয়। সিরিয়াল দিতে হয়।
পাশের দেশ ইন্ডিয়াতে Narayana Hrudayalaya Health City, Bangalore তে রোগীর লোক সুস্থ-সবল সক্ষম হলে রক্তদান বাধ্যতামূলক।
একটা বাস্তব ঘটনা বলি। আমাদের ভলান্টিয়ার নাঈম মজুমদারের প্রত্যক্ষ ঘটনা। সে ভারতে স্বেচ্ছায় ৩ বার প্লাটিলেট ডোনেট করেছিলো।
তো সেখানে চিকিৎসা নিতে যাওয়া এক (বাংলাদেশী) রোগীর ৫ ব্যাগ এবি+ রক্ত লাগবে। রোগীর লোকের রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ।
নাঈমও তাকে অন্য রোগীকে বি+ ডোনেট করতে বললে সে অযুহাত দেখায়! অথচ সুস্থ সবল একজন যুবক!
হাসপাতাল কতৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয়, আপনি ১ ব্যাগ বি+ দেন, আমরা আপনার রোগীর জন্য ৫ ব্যাগ এবি+ এর দায়িত্ব নিবো।
যদি আপনি ডোনেট না করেন, তাহলে নিজ দায়িত্বে আপনার রোগীর জন্য ৫ ব্যাগ আপনিই ম্যানেজ করেন, আমরা রক্তের দায়িত্ব নিবো না। রক্ত ম্যানেজ করেন অসুবিধা নাই। অপারেশন হবে।

ব্যাস! ক্যারাব্যাড়া লেগে গেল।
যারা রক্তদান নিয়ে কাজ করেন তারা জানেন যে পজিটিভ রক্তের গ্রুপ গুলোর মধ্যে এবি+ তুলনামূলক রেয়ার।

অনেক এদিক ওদিক করে ঐ ভদ্র যুবক ঠিকই শেষ পর্যন্ত রক্ত-বাধ্যতামূলক-দান করলো!
সেখানে অবশ্য রোগীর লোকের রক্ত গুলো চমৎকারভাবে সংরক্ষণ করা হয়। এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চমৎকার। ব্যাগ নিয়ে দুর্নীতি নাই। এর রক্ত ওরে দেয়া, এইভাবে নিয়ম করা।

আমরা শুধু আত্মীয়ের জন্য খুঁজি, নিজের গ্রুপ না মিললেও যে অন্য রোগীকে দেয়াই যায় এই চিন্তা করি না। স্বার্থপর!
একে অপরকে দিলেই কিন্তু হাসপাতালেই রোগীর আত্মীয় দ্বারা, রোগীকে দেখতে যাওয়া লোকজন দ্বারা অনেক রক্তই ম্যানেজ হয়ে যায়!

যাই হোক, এইবার একটা গল্প বলি। (কাল্পনিক)

একদিন বাংলাদেশের এক হাসপাতালে এক রোগীর এ পজিটিভ রক্ত লাগবে।

রোগীর খুব নিকটাত্মীয় ইয়াং একজন খুব আফসোস করছে! রোগীর ছেলের সাথে গল্প করছে।
ইস তার রক্তটা যদি মিলতো, সেই দিয়ে দিতো। কিন্তু তার তো বি পজিটিভ
ভাবখানা এমন যেন- যদি দিলেই হতো এক্ষুনি শুয়েই পরে রক্তদানের জন্য।
কথাবার্তার ফাঁকে জানা গেল রোগীর ছেলের রক্তের গ্রুপ এবি+

পাশের বেডে এক রোগীর আবার এবি+ রক্ত লাগে।
দুইজন স্বেচ্ছাসেবী ইরফান এবং শাহিন এ+ ডোনার নিয়ে গিয়েছিলো।
তারা তখন রোগীর ছেলেকে রিকুয়েষ্ট করে এবি+ ডোনেট করার জন্য।
কিন্তু রোগীর ছেলে অস্বীকৃতি জানায়। আপত্তি জানিয়ে বলে সে দুর্বল হয়ে যাওয়ার ভয় করতেছে!

এই কথা শুনে ভলান্টিয়ারের মাথা তো সেই গরম!
তার বাবাকে এ পজিটিভ ম্যানেজ করে দিলো! অথচ যখন রক্তদাতা নিয়ে হাসপাতালে আসে তখন কতো খোশগল্প। তারা আবার রোগীর ছেলেকে অনেক মোটিভেশান দিয়েছিলো, বুঝিয়েছিলো। ছেলেটিও বলেছিলো কারও এবি+ লাগলে তাকে জানাতে।
আধ-ঘন্টা খানেক আগে যে ছেলে হাসিমুখে রাজি ছিলো সে ❝খাড়ার উপ্রে পল্টি খাইলো❞!
এ পজিটিভ রক্তই সে পাচ্ছিলো না কোথাও, ব্যস্ত শহর ঢাকায় যে কোন গ্রুপই পাওয়া একটু কঠিন। ডোনার পেয়ে যেন চাঁদ হাতে পেয়েছিলো! এই ছেলে এখনই না করে!

তারা যখন একটু জোরাজোরি করলো তখন রোগীর ছেলে একরকম ফেঁসে কোনমতে পার পাওয়ার নানাবিধ ফন্দি করছিলো! আর ঐ যে ইয়াং আত্মীয়, সেও উল্টো ভলান্টিয়ারদের বুঝাচ্ছিলো। চোখমুখ দেখে বুঝাই যাচ্ছিলো সেও একটু বিপদে পরেছে মনে হয়! যদি তার কাছেও হাসপাতালের কোন রোগীর জন্য স্বেচ্ছাসেবীরা রক্ত চেয়ে বসে!

রেগেমেগে ফায়ার হয়ে ইরফান হাসপাতালেই চেঁচিয়ে ওঠে-

শাহিইইন, রোগীর পোলারে ধরে ফেল!

 

গল্প: রক্তবন্ধু মোঃ তাসনিমুল বারী


শেয়ার করুন:

Facebook Comments