রঙ্গীন বরফ
Author: রক্তবন্ধু | 25 Sep 2021
রঙ্গীন বরফ
শুক্রবার। বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ। কিছু গুরুত্বপূর্ণ কেনাকাটার জন্য সুপারমার্কেটের সামনে থেকে জাহাজ কোম্পানির দিকে হাটছি। ২ মণ ওজনের শরীর নিয়ে এই প্রখর রোদে হাঁটাটা একটু কষ্টদায়ক। ঘেমে শার্ট একদম ভিজে গেছে। হাঁটছি আর দোকান খুঁজতেছি। হঠাৎ পিছন থেকে একজন ডাকলো।
– ‘ভাইজান, আইসক্রিম খায় যান।’
এমন মায়াবী একটা হাসিজড়ানো কন্ঠে বললো যেনো তিনি আমার কত্ত পরিচিত। প্রখর রোদের মাঝে একটা আইসক্রিম মন্দ নয়। তাই দিবার জন্য বললাম। আইসক্রিম হাতে নিয়ে যখন টাকা দিবো তখন উনি আবার হাসিমুখে বললেন-
– ‘ভাইজান, আমারে চিনতে পারেন নাই? আমি হেলাল। আপনে আমার পোলাটারে রক্ত দিছিলেন মেডিকেলে।’
আমি একদম চিনতে বা মনে করতে না পেরে বললাম কবে দিছিলাম আর আপনার ছেলে কেমন আছে?
উনি এবার মনে করায় দিলেন। ২০১৩ সালে দিছিলাম উনার ছেলেকে রক্ত। রংপুর মেডিকেলেই। তখন আমি রংপুর ক্যান্টে এইচএসসি পড়তাম। ছেলেটা রোড এক্সিডেন্ট করে ভর্তি ছিলো। রক্ত দিবার কিছুক্ষণ পরই মারা যায়। ছেলের লাশ নিয়ে কত্ত কান্না করছিলেন হেলাল ভাই আর উনার স্ত্রী।
মুহুর্তেই উনি যেনো অনেক আপন হয়ে গেলেন। রোদের তীব্রতাও আমাদের গল্পে লজ্জা পেয়ে গেলো। দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে হেলাল ভাইয়ের আবদারে বাধ্য হয়ে আমি আরেকটি আইসক্রিম হাতে নিয়ে রিকশায় উঠে গেলাম।
রঙ দেয়া বরফ মুখে নিয়ে ভাবছি মানুষটা কত্ত সহজ সরল। আজ প্রায় ৮ বছর পর দেখা। উনি কত সুন্দর মনে রেখেছেন। দেড় মণের শরীরটা দুই মণ হয়ে গেছে কিন্তু হেলাল ভাই আমাকে ঠিক চিনতে পেরেছেন!
পৃথিবীটা গোল। হয়তো আবার কোথাও আমার সাথে হেলাল ভাইয়ের দেখা হবে। তখনও কী উনি আমায় চিনতে পারবেন? তখনও কী উনি বলবেন আপনি আমার ছেলেকে রক্ত দিছিলেন?
মানুষ কতদিন মনে রাখে এভাবে!
[ রুমে এসে ডায়েরির পাতা উল্টিয়ে দেখলাম ছেলেটাকে রক্ত দিছিলাম ২৬ নভেম্বর ২০১৩ তে। সেদিন ছিলো আমার দ্বিতীয় রক্তদান ]
খায়রুল হাসান সিফাত
৫ম বর্ষ , রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

roktobondhu.com/details
অন্যান্য পোস্ট সমূহ
মেহেদির ১০৬ ও রক্তবন্ধু
Author: রক্তবন্ধু | 13 Oct 2025
১০৬ বারের রক্তদানের ভেতরে রক্তবন্ধু থেকে প্রথম ফোনের মাধ্যমে প্লাটিলেট দান। ২০২০ এর দিকে রক্তবন্ধু ওয়েবসাইটে আমি রেজিস্ট্রেশন করি। https://roktobondhu.com আমার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। দীর্ঘ...
টহলরত সেনা সদস্যের রক্তদান
Author: রক্তবন্ধু | 21 Jun 2025
টহলরত সেনা সদস্যের রক্তদান দিনাজপুরে জরুরিভাবে রক্ত দিয়ে এক প্রসূতি মায়ের জীবন বাঁচিয়েছেন টহলরত এক সেনা সদস্য। শুক্রবার (২০ জুন) রাতে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ...
পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই গভীর রাতে প্লাটিলেট দান।
Author: রক্তবন্ধু | 07 May 2025
রাত জেগে মুমূর্ষু রোগীকে ব্লাড দেয়ার অভিজ্ঞতা অনেক আছে তবে আজকে ঘটনাটা কাকতালীয় ভাবে অন্য দিনের থেকে আলাদা। ঘটনাটি ০৬/০৫/২০২৫ তারিখের। বেশ অনেকদিন ধরে...
Facebook Comments