প্রথম রক্তদান ও রক্তবন্ধু হয়ে ওঠার গল্প

শেয়ার করুন:

সেদিন ছিলো ০৯/০৬/২০১৯ রোজ রবিবার। দুপুর আনুমানিক ১২ টার সময় আমার কাছে একজন ভদ্র লোক ফোন দিয়ে বললেন ইরফান ভাই বলছেন?

আমি বললাম জ্বী।

উনি বললেন আমি roktobondhu.com ওয়েবসাইট থেকে আপনার নাম্বার নিলাম। আপনার ব্লাড গ্রুপ কি এবি পজিটিভ?

আমি বললাম হ্যাঁ আমার ব্লাড গ্রুপ এবি পজিটিভ।
উনি বললেন আমার ছেলের ব্লাড ক্যান্সার, এবি পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন আপনি কি দিতে পারবেন?
আমিঃ কখন লাগবে ?
রোগীর বাবাঃ বিকাল ৫ টার মধ্যে।
আমিঃ আমার তো অফিস থেকে বের হতে রাত ১০ টা বেজে যাবে আর আজকে কোনো ভাবেই ছুটি নিতে পারবো না! আমার সাথের জন ছুটিতে গেছে 😔

যদি রাত ১০ টার পর হয় তাহলে আমি দিতে পারবো।
রোগীর বাবাঃ না ভাই ৫ টার মধ্যেই লাগবে 😪
আমিঃ যদি কোনো ভাবে না পান আর রাত ১০ টার পর হয় তাহলে আমাকে কল দিয়েন আমি মতিঝিলে আছি এখান থেকে শাহবাগ পি জি হাসপাতাল খুব বেশি দূরে না
রোগীর বাবাঃ আচ্ছা ভাই

এরপর রোগীর বাবার ফোন আসলো সন্ধ্যার পরে আনুমানিক ৭ টার দিকে। ফোন দিয়ে বললেন ভাই ব্লাড তো পাই নাই আপনি কি দিবেন?
আমিঃ আগেই বলেছি রাত ১০ টার পর হলে আমার কোনো সমস্যা নাই।
রোগীর বাবাঃ আচ্ছা ঠিক আছে আপনি তাহলে ১০ টার সময় আসেন আমিও বাসা থেকে বের হবো !
আমিঃ আপনি কি হাসপাতালে নাই?
রোগীর বাবাঃ না ভাই ব্লাড না পাওয়ার কারণে বাসায় চলে এসেছি। আপনি যদি এখন দেন তাহলে এই ব্লাড টা টেনে রাখবো কালকে push করাবে।
আমিঃ আমার তখন একটা কথা মনে পড়লো ঢাকায় নাকি দালালদের অভাব নাই 😔

সাথে সাথেই ফোন দিলাম রক্তবন্ধু ওয়েবসাইট এর নিচে দেওয়া ফোন নম্বরে।
ফোন দিয়ে বললাম ভাই আপনার ওয়েবসাইট থেকে ফোন দিয়েছিলো এক লোক। তার নাকি ব্লাড লাগবে। কিন্তু তার রোগী হাসপাতালে নাই! আমি তো কোনোদিন এর আগে ব্লাড দেই নাই। যদি দালাল হয় তাহলে আমার প্রথম  রক্তদান বৃথা !

পরে  রক্তবন্ধু আইডি ভাই বললেন রোগীর লোকের নাম্বার আমাকে দেন আমি কথা বলে দেখি! পরে উনি রোগীর লোকের সাথে কথা বললেন। রোগীর বাবা রক্তবন্ধু ভাইকে ইমো তে সব কিছুর বিস্তারিত তথ্য দিলেন।
তারপর উনি বললেন আপনি ব্লাড দিতে যান সমস্যা নাই তারপরও রোগীর বাবার গতিবিধি লক্ষ্য করবেন দালাল হলে তো বুঝতেই পারবেন। রক্তদান যেন বৃথা না যায়, যাবতীয় সহযোগিতা পেয়েছিলাম তার কাছ থেকে।

অফিসে স্যার কে বলে রাত ৯ টার দিকে বের হলাম! জীবনের প্রথম রক্তদান তাও কাউকে না জানিয়ে রাতে একাই যাচ্ছি। কারণ অফিসের অনেকে নিষেধ করেছিলো রক্ত দিতে! সমস্যা হবে ইত্যাদি ভয় দেখিয়েছিলো। হাসপাতালে গেলাম রোগীর বাবার আসতে ১০ মিনিট লেট হলো আমি ১০ মিনিট অপেক্ষা করলাম।

হাসপাতালের ভেতরে গেলাম ব্লাড স্যাম্পল দিলাম। টেস্ট করে ব্লাড দিয়ে বাসায় আসতে রাত ১২:৪৫ বাজলো। এতো রাতেই রক্তবন্ধু  ভাইকে ফোন দিয়ে বললাম ভাই ব্লাড দিয়ে আসলাম। আমি তখনও জানতাম না যে উনার নামই নবীন (Tasnimul Bari Nabin)। আর  সেটা তারই ফোন নম্বর। আমি রক্তবন্ধু নামে যে আইডি সেটাতেই যোগাযোগ করছিলাম।

উনি আমার রক্তদানের ছবিটা নিলেন।

পরের দিন দেখি রক্তবন্ধু গ্রুপে আমার রক্তদানের ছবি পোষ্ট করেছেন। আমিতো এটা জানতামও না যে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ব্লাড ম্যানেজ হয়!
আমার ছবিতে অনেকগুলো লাইক দেখে মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম শুধু! আমার ছবি, পোস্টে কখনো এতো লাইক পরে নাই! সত্যি বলতে ফেসবুকের অনেক কিছুই বুঝতাম না। ক্যাপশন সহ পোস্টটাই আমাকে  পরবর্তীতে রক্তদান নিয়ে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেছিলো।

কিছুদিন পরেই ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ জিয়া উদ্যানে রক্তবন্ধুর মিটিং হয় সেখানে ভাইয়ের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ হয়। আর এতোদিন ফেসবুকে,  রক্তবন্ধু গ্রুপে যুক্ত থেকে রক্তদানের ব্যাপারে শিখেছি।

বলা বাহুল্য, রক্তদানের পর আমার ১০৪ ডিগ্রি জ্বর আসে! অফিসে অনেকেই বলতেছিলো ব্লাড দিলে জ্বর হয় দেখেছো?
আমি আমার কথায় অনড় ছিলাম যে ব্লাড দেওয়ার কারণে জ্বর আসছে এটা আমি মানি না। বিশ্বাসও করি নাই। হয়তো সিজিনাল বা অন্য কোন কারণেই জ্বর এসেছিলো।

ফেসবুক গ্রুপ, পেজ অনেক কিছু জানতাম না। নিজেরও রক্তদানের আগ্রহ ছিলো কিন্তু সুযোগ পাচ্ছিলাম না। বিভিন্ন app এ রেজিস্ট্রেশনও করেছিলাম! কোন সাড়া-ডাক পাইনি। রক্তবন্ধু নামে একটা আইডি ছিলো, সেখান থেকেই রক্তবন্ধু সম্পর্কে জেনেছিলাম। এরপর ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম এবং প্রথম কল পেয়ে প্রথম রক্তদান করেছিলাম।

                             ❤️

এখন সেই অফিসের অনেকজনই রক্তদানের জন্য আমার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করে৷ রক্তদানের সময় হলেই আমাকে জানিয়ে দেয়, রোগি খুঁজে দিতে বলে।

অফিসে কারো রক্ত লাগলেও একটাই নাম!

রক্তবন্ধু ইরফান ভাই!


শেয়ার করুন:

Facebook Comments