মিমির ২০০ মিলি রক্তদান

শেয়ার করুন:

মিমির ২০০মি.লি রক্তদান

(৬ মে, ২০২০)

ভলান্টিয়ার আহসান হাবীব এক থ্যালাসেমিয়ার বাচ্চার জন্য 200ML রক্ত খুঁজছিলেন। রক্তবন্ধু’র ভলান্টিয়ার ইরফান সাহেব কৌশিককে ম্যানেজ করে দিলো৷ কৌশিক রায় রক্তবন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা স্বরুপ ইরফানকে জানিয়ে রেখেছিলেন “পঞ্চগড়ে বাড়িতে যতোদিন আছি ও+ লাগলে ১ ঘন্টা আগে বলবেন।”
তো…ডোনার গ্যারান্টি O+ve রং পাক্কা।

এদিকে অনেকদিন থেকে লুকিয়ে রক্তদানে আগ্রহী  প্রস্তুত রক্তদাতা আমাদের নারী রক্তবন্ধু আফসানা মিমি আপা! রমজান মাসে ১ এ ৭০ বলেও কথা!

আমি চাইলাম রমজান মাস, দিনের বেলা, সম্ভব হলে মিমিই দেউক। পরিমানও কম। ছেলে মানুষ যখন তখন যেতে পারবে, রাতেও দিতে পারবে। জরুরি মূহুর্তে হুট করে কারো লাগলে যেতে পারবে।

কৌশিককে ক্যান্সেল করে মিমিকে কনফার্ম করা হলো। মিমি আপু ২০০ মি.লি রক্ত দিয়েও আসলো।

✆ রক্তবন্ধুঃ বাড়িতে কোন সমস্যা হয় নাই? কি বলে বের হলেন?

✆ ✆ মিমিঃ ইরফান ভাইয়া যখন কল দেয়, আমি বাড়িতে অন্যকিছু বলে বের হতে রাজি হওয়ার কথা বলছিলাম, কল কেটে দেখি সামনে আম্মু সাক্ষাৎ উপস্থিত দাঁড়িয়ে !

-কি বল্লি তুই?? রোজা নিয়ে যাবি? তাও যেতে দিতাম! করোনার সময় হাসপাতালে যাবি!! অন্য কাউকে ম্যানেজ করা যেতো না?

— আম্মুউউউ, ছোট্ট বাচ্চা! এইটুকু রক্ত লাগবে। কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না! বাচ্চাটা মারাও যেতে পারে। ওরা ভজনপুর গ্রাম থেকে রওনা দিয়েছে।

✆ এরপর??

— কি আর বলবে, মা তো! বাচ্চার কথা শুনে নরম হয়েছে!

অতঃপর ইনবক্সে ম্যাসেজ আসলো।

(ম্যাসেঞ্জারের স্ক্রিনশট থেকে)

“ভাইয়া, ব্লাড দিয়ে আসলাম। বাচ্চা-টা দেখে প্রচুর কান্না পাচ্ছিলো। মাত্র আড়াই বছর বয়স। ফুটফুটে, কি সুন্দর বাচ্চা’টা।”

(ছবি আমিই তুলতে বলেছিলাম)

“বাচ্চা’টা কতো কিউট দেখেন। মনে হচ্ছিলো, কোলে নিয়ে জড়িয়ে ধরি। বাচ্চা’টাকে দেখেই চোখে পানি চলে আসছিলো আমার।”

বাচ্চার মা জোর করে কিছু টাকাও দিতে চাচ্ছিলো!! কিএক্টাবস্তা! “অসম্ভব” বলে উল্টো মিমি আপুই বাচ্চার হাতে কিছু টাকা দিয়ে এসেছেন। একজন ছাত্রীর নিজের টাকা খরচ করে রক্ত উপহার দিয়ে আবার নিজেই সহযোগিতা স্বরুপ অর্থ উপহার দিয়ে নিজ খরচেই বাড়ি আসাটা অন্তত এই করোনা কালে… উফ! ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
২৫০ কোটি স্যালুট হবে!

রক্তবন্ধুঃ এখন তো অন্যদের উৎসাহিত করতে রক্তদানের ছবি ফেসবুকে দিতে সমস্যা হবে না তাই না? বাড়িতে তো রক্তদানের কথা জানিয়েই আসা হয়েছিলো।

মিমিঃ 😃 (হাসি)

রেডি ডোনার কনফার্ম, ক্যানসেল, এনাদার ডোনার কনফার্ম, হাবীবের সাথে আবারও কথা বলা, এগুলো আবার আমাকে কনফার্ম করা! ইস! ইরফান পাঠানের উপর ব্যাপক ধকল গেলো।

এদিকে মরার ঘাট থেকে সেই পুরোনো আব্দুর রহমান এসে হাজির! ইনবক্সে ম্যাসেজ দিচ্ছে!
“আজকে পঞ্চগড় (শহরে) আসছি। কারো লাগলে দিবো”

আমিঃ দেয়া শেষ! কারো লাগলে দেখা যাবে। গ্রুপে পোস্ট দে।
বেচারি গ্রুপ ব্লক খেয়ে আছে। তাই পোস্ট দিতে পারছে না। রোজা নিয়ে ব্লক খাচ্ছে! খা, বেশি করে ব্লক খা!

পঞ্চগড়ে যে আরোও O positive দুইজন প্রস্তুত রক্তদাতা আছে, এটা নিয়ে আমি আজ গ্রুপে কোন পোস্ট দিবো না। 😉

এখন যদি সিনেমার ডায়ালগ নকল করে আপনারা আমাদের মিমি আপুকে ১ লিটার ধন্যবাদ দেন, মিমি আপু ১ মি.মি প্রসস্থ গম্ভীর হাসিমুখে বলবে “এটা তো আমার কর্তব্য ছিলো”

একদিন পৃথিবী সুস্থ হবে।
হবে করোনা মুক্ত।
রক্তদানের সুখের হাসিগুলো আর থাকবেনা মাস্ক এর আড়ালে বন্দী।
হাসি হবে উন্মুক্ত।
হ্যাপি ব্লাড ডোনেটিং।
❤️ আমরা রক্তবন্ধু, রক্তের সম্পর্ক গড়ি ❤️

লেখা মোঃ তাসনিমুল বারী 

roktobondhu.com স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের ওয়েবসাইট। স্বেচ্ছায় রক্তদাতাগণ রেজিস্ট্রেশন করুন।
রক্তদানের পরে ওয়েবসাইটে লগইন করে সর্বশেষ রক্তদানের তারিখ পরিবর্তন/আপডেট করে দিলে ঐদিন থেকে ১২০ দিন মানে আগামী ৪ মাস রক্তদাতার নাম কাটা অবস্থায় দেখা যাবে।
৪ মাস পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডোনারের নাম স্বাভাবিক ফন্টে দেখা যাবে।
প্রতিবার রক্তদানের পর লগইন করে অবশ্যই সর্বশেষ রক্তদানের তারিখ পরিবর্তন করে দিবেন।
N.B: নারী ডোনারগণ ফোন নম্বর গোপন রাখতে “নারী” সিলেক্ট করুন।
✅ বিস্তারিতঃ roktobondhu.com/details


শেয়ার করুন:

Facebook Comments