মালেশিয়াতে রক্তবন্ধুর রক্তদান
Author: রক্তবন্ধু | 04 Mar 2022
অবশেষে মালেশিয়ায় প্রবাসীর ৩ বছর পর রক্তদান
মালেশিয়া প্রবাসী কুমিল্লার সন্তান, নাঈম মজুমদার। বিদেশ যাওয়ার পর বহুভাবে চেষ্টা করেছে রক্তদান করার। কিন্তু দেশের বাইরে রক্তদান সহজ কোন বিষয় নয়। চাইলেই রক্তদান করা যায় না। অনেক প্রক্রিয়া, ডকুমেন্টস, ফর্মালিটির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কেউ ডোনার কার্ড তথা অনুমোদন ছাড়া রক্তদান করতে পারে না। এই দীর্ঘ সময়ে তবুও বসে থাকেননি। চেষ্টা করেছেন প্রবাসে রক্তদান করতে কি কি করা যায় সব খোঁজ রাখতে । প্রবাসে থেকেও রক্তবন্ধুতে ভলান্টারি করে যাচ্ছেন নিয়মিত। বিদেশে থেকেও দেশের বহু রোগীর জন্য অনেক রক্তদাতা ম্যানেজ করে দিয়েছেন তিনি। এমনকি কিছুদিন আগেও রক্তবন্ধুতে বার্ডেম (ইব্রাহিম কার্ডিয়াক) হাসপাতালের এক রোগীর ব্লাড রিকুয়েষ্ট এসেছিলো।পৃথিবীর অন্যতম দুর্লভ গ্রুপ বোম্বে ব্লাডের ডোনারও তিনি বিদেশে বসেই ম্যানেজ করেছিলেন।
কিন্তু নিজে রক্তদান করতে পারছেন না জটিলতার জন্য এই আফসোস যাচ্ছিলো না। তাই মালেশিয়ার রক্তদান বিষয়ক সকল পেইজ, লিংকে নিয়মিত চোখ রাখতেন।
বলা বাহুল্য, মালেয়শিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই (UAE) তথা বহির্বিশ্বে চাইলেই রক্তদান করা যায় না। ওসব দেশে সরকারি ভাবে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ করা হয় এবং চাহিদা ও প্রয়োজন মতো রাষ্ট্রীয় ভাবেই সরবরাহ করা হয়।
তো কিছুদিন আগে জানতে পারলেন পাশের সিটিতে ক্যাম্পেইন হবে। রক্তবন্ধু গ্রুপে পোস্টও করেছিলেন মালেশিয়াতে আশেপাশে যারা আছেন, রক্তদানে ইচ্ছুক, দেশের প্রবাসী ভলান্টিয়ার যারা আছেন চাইলে আসতে পারেন।
নাঈম এর ডিউটি শেষ করতে সাধারণত বিকেল পাঁচটা বাজে। হিসাব নিকাশ বুঝিয়ে রাত ১০টার দিকে বের হতে হয়। শুধু রক্তদান করবেন বলে সব টার্গেট, এচিভমেন্ট ও হিসাব-নিকাশ আশ্চর্যজনকভাবে দুপুর ১২টার মধ্যে শেষ করে ফেলেন! বস এর কাছে ছুটি চাইলেন। বসও দেখলেন সব তো OK হয়েই গেছে, তিনিও খুশি হয়ে ছুটি দিলেন।
নাঈম উচ্ছ্বসিত হয়ে জুম্মার নামাজ পড়ে Aman Perdana থেকে রওনা হলেন Klang Parade Shopping Mall এর দিকে, যেখানে ক্যাম্পেইন চলছে। উল্লেখ্য, মালেশিয়াতে ট্রান্সপোর্ট খরচ ব্যয়বহুল। ১৫ কিলোমিটার যেতে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১,১০০ টাকা লেগেছে। অর্থাৎ রক্তদান করতে যাতায়াত ভাড়াই লাগলো ২,২০০ টাকার মতো।
পৌঁছে দেখলেন তার দেশী বন্ধু নয়নও এসেছে রক্তদানে, আছেন অপেক্ষায়৷ তার আবার রাত্রে ডিউটি আছে, তাই তাঁকেই আগে সুযোগ দিলেন। কিন্তু বিধিবাম! নার্স জিজ্ঞেস করলেন গতকাল কয়টায় ঘুমিয়েছেন? “রাত ২টা”বলাতে আর কোনভাবেই রক্ত নিলেন না। শত চেষ্টা করেও রাজি করানো যায়নি।

অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
রক্তবন্ধু নাঈম সকল টেস্টে উত্তীর্ণ হলেন এবং ক্যাম্পেইন ক্লোজড হওয়ার শেষ মূহুর্তে সফলভাবে B+ve রক্তদান সম্পন্ন করলেন। তাদের সাথে কথা বললেন। জানালেন তার নিজের এবং প্রবাসী অনেক বাঙালির রক্তদানের ইচ্ছের কথা। সব শুনে কর্তৃপক্ষ খুব খুশি হয়ে তাকে ডোনার বই এবং ডোনারকার্ড করে দিলেন। যেটা দেখালেই এখন মালেশিয়া এবং সিঙাপুরের যে কোন ব্লাড কালেকশন ক্যাম্পেইনে তিনি সরাসরি রক্তদান করতে পারবেন কোন ঝামেলা ছাড়াই! শুধু তাই নয়, তারা নোট করে রাখলেন নাঈমের ফোন নম্বর। পরবর্তীতে তারা যোগাযোগ করবেন এবং মালেশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য যারা রক্তদানে ইচ্ছুক তাদের ব্যাপারে তারাও নাঈমের সাথে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
নাঈম জানান, ❝নিয়মিত রক্তদান করতে পারলে এতোদিনে ১৭ বার রক্তদান করতে পারতাম। আমার দ্বারা ১৭ জন মানুষের হেল্প হতো। প্রবাসে থাকার কারণে এই সুযোগ হতে বঞ্চিত হয়েছি। মালেশিয়াতে এটা আমার প্রথম রক্তদান। দেশে পাঁচবার রক্তদান করেছি। অর্থাৎ এটা আমার ষষ্ঠ রক্তদান। শুধু বাংলাদেশি নয়, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান বা যে কোন ফরেনার যদি মালেশিয়াতে রক্তদান করতে চায় আমি সহযোগিতা করতে পারবো❞
রক্তবন্ধুর প্রবাসী এডমিন ছাড়াও নাঈমের আরও দুইটি পরিচয় আছে। তিনি কুমিল্লার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রক্তকমল ফাউন্ডেশন এর সহ-সভাপতি।
করোনাকালে প্রবাসে থেকেই দেশের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন টিম ওয়ারিয়র্স। যা মূলত অসহায় দরিদ্রদের সহযোগিতার জন্য গঠন করা হয়েছিলো। তবে অক্সিজেন ব্যাংক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলো। স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় ১৮টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনেছিলো সংগঠনটি। ২ টি ছিলো অন্য রোগীর। এই মোট ২০টি সিলিন্ডার দিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অক্সিজেন সেবা দিতো সংগঠনটি। তবে এখনও প্রয়োজন হলে অক্সিজেন সেবা দিয়ে যাচ্ছে টিম ওয়ারিয়র্স বলে জানান সংগঠনটির ফাউন্ডার নাঈম মজুমদার।
দেখুন রক্তবন্ধু নাঈম এর রক্তদানের ভিডিও।
থিম সং- সুব্রত দেব
অক্সিজেন সেবায় টিম ওয়ারিয়র্স সম্পর্কে জানতে পড়ুন
অন্যান্য পোস্ট সমূহ
মেহেদির ১০৬ ও রক্তবন্ধু
Author: রক্তবন্ধু | 13 Oct 2025
১০৬ বারের রক্তদানের ভেতরে রক্তবন্ধু থেকে প্রথম ফোনের মাধ্যমে প্লাটিলেট দান। ২০২০ এর দিকে রক্তবন্ধু ওয়েবসাইটে আমি রেজিস্ট্রেশন করি। https://roktobondhu.com আমার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। দীর্ঘ...
টহলরত সেনা সদস্যের রক্তদান
Author: রক্তবন্ধু | 21 Jun 2025
টহলরত সেনা সদস্যের রক্তদান দিনাজপুরে জরুরিভাবে রক্ত দিয়ে এক প্রসূতি মায়ের জীবন বাঁচিয়েছেন টহলরত এক সেনা সদস্য। শুক্রবার (২০ জুন) রাতে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ...
পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই গভীর রাতে প্লাটিলেট দান।
Author: রক্তবন্ধু | 07 May 2025
রাত জেগে মুমূর্ষু রোগীকে ব্লাড দেয়ার অভিজ্ঞতা অনেক আছে তবে আজকে ঘটনাটা কাকতালীয় ভাবে অন্য দিনের থেকে আলাদা। ঘটনাটি ০৬/০৫/২০২৫ তারিখের। বেশ অনেকদিন ধরে...
Facebook Comments