ভৈরবের হরিপদ

শেয়ার করুন:

ভৈরবের হরিপদ

মো. নজরুল ইসলাম

আপনি ভৈরব রাণীর বাজারের বাসিন্দা হয়ে হরি কে চিনবেন না, তা তো হয় না।

হরিপদ আমাদের চামড়ার সব সমস্যা সমাধান করে, কারণ এই মহল্লায় সে ছাড়া আপনি আর কোন চর্মকার পাবেন না।

আমি যখন ক্লাস থ্রি-ফোরে পড়তাম, তখন তার বাবা মনুরঞ্জনের কাছে জুতা সেলাই করতে গেলে তিনি আমাকে দেখেই একটা ছড়া আবৃত্তি করতেন খুব সুর করেঃ

নজরুল মিয়া বেপারী-
চাইল-কাড়া আকারী,

ভাংগা ডেগের বারি খাইয়া-
ঘুরে তাড়াতাড়ি।

এখন উনি আগরতলা চলে গেছেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে, তাই এখন আর সেই ছড়া শোনা হয় না। শুধু হরি রয়ে গেছে আমাদের মাঝে আমাদের সেবার জন্য।

তবে বেশ কিছুদিন আগে আমার একটা সুযোগ এসেছিল হরির সেবা করার জন্য। সবাই আমার মত সমাজের নিম্ন শ্রেণীর সেবা করার সুযোগ পায় না। আমি রিক্সা-ওয়ালা, মাঝি, কামার, কুমার, নাপিত, ভ্যান-চালক সবার সেবা করার সুযোগ পাই।

যাই হোক, হরির পরিবারের (স্ত্রীর) এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা উঠলে অপারেশন করার জন্য দুই ব্যাগ এবি পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন হয়েছিল। তখন আমি ভৈরবের বিখ্যাত জনতা হোটেলের মালিকের ছেলে জামান আর রাণীর বাজার শাহী মসজিদের সাবেক মুয়াজ্জিন নাসির ভাইয়ের ছোট ভাই গোফরান কে পাঠিয়েছিলাম রক্তদান করার জন্য। সেই থেকে শুরু- উপকার পেয়ে হরি ও তখন থেকে রক্ত দিতে চাচ্ছে। কিন্তু তার ওজন কম দেখে আমি এতদিন নিতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু ইদানীং দেখলাম- সে ভালই নাদুস-নুদুস হয়ে গেছে।

সুতরাং- এখন ভৈরবে কোথাও কোন রোগীর এ পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন হলেই সবার আগে হরি কে শোয়ানো হবে।

নো টেনশন- কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

কাউকে না।


হ্যাঁ- এই সেই হরিপদ।

ভৈরব রাণীর বাজার শাহী মসজিদের মোড়ে বসে সে আমাদের জুতা সারাই করে। তারপর একদিন ভৈরব মেঘনা হাসপাতালে রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত একজন বৃদ্ধ বাবার জন্য সে জীবনে প্রথম বারের মত এক ব্যাগ এ-পজিটিভ রক্ত উপহার দিয়ে আসে।

এভাবে শিল্পপতি, ব্যাংকার, সরকারি-বেসরকারি, চাকুরিজীবী, রিক্সা-ওয়ালা, মাঝি, কামার, কুমার, নাপিত, ভ্যান-চালক, মুচি, জেলে, বেকার-আকার, রাজনীতিবিদ, গণিতবিদ, বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী কেউ বাদ যাবে না রক্তদান থেকে, সবাইকেই উৎসাহ দিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকেরা রক্তদানের জন্য।


শেয়ার করুন:

Facebook Comments