“বুড়োটাকে আপনাদের সাথে রাখুন”
Author: রক্তবন্ধু | 01 Nov 2020
২০০৩ সালে আমার বাবাকে প্রথম রক্তদানের মাধ্যমে শুরু হয় আমার রক্তদান কর্মসূচী।
ক্যান্সারের রোগী বাবার যে দোয়া আমি পেয়েছি তা দেখে আর লোভ সামলাতে পারিনি। সেই থেকে সময়ে অসময়ে নিজের গ্রুপ এবং অন্যগ্রুপ, সব গ্রুপের ব্লাড ম্যানেজ করা একটা নেশায় পরিনত হয়।

বাবা মৃত হাজী জাকির হোসাইনের সাথে মোশারফ মিলন
১৭ বছর ধরে রক্তদান করছি। কতোবার দিয়েছি সেই প্রশ্নের উত্তর, হিসেব রাখি নাই। কতোদিন ক্রসম্যাচের টাকাটাও রোগীর ছিলোনা তাও ম্যানেজ করতে হয়েছে। অনেক ভালোবাসা যেমন পেয়েছি তেমনি অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণও আমাকে স্তব্ধ করেছে, কিন্তু হতাশ হইনি। কোন রোগীর কাছে যাতায়াতের ভাড়াটাও কখনো চাইনি। এ এক অন্তরের প্রশান্তি।

করোনাকালে ঢাকা মেডিকেলে এক প্রসূতি মা’কে শেষবার রক্তদান
গতকাল (৩০/১০/২০২০ইং) ও পজিটিভ ব্লাড গ্রুপের একটা রিকোয়েস্ট আসে রায়হান ভাইয়ের রেফারেন্সে। আজগর আলী হাসপাতাল আর আমার বাসার দূরত্ব ১০০টাকা রিকশা ভাড়া। আমি জুম’আর নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হাতে বেশ একটা সময় আছে দেখে দৌড় দিলাম। হাসপাতালের রক্ত সংগ্রহ রুমে ঢুকার পর আমার চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করলেন –আপনার বয়স কতো? বললাম প্রায় উনপঞ্চাশ। কোন ঔষধ কন্টিনিউ করছি কিনা জানতে চাইলে আমি বলি, “জ্বী আমি শ্বাসকষ্টের কিছু ঔষধ এবং প্রেসারের ঔষধ কন্টিনিউ করছি।” উত্তর শুনার পর ডিউটি অফিসার বললেন-
চাচা, আপনি আপাতত আর রক্ত দিতে পারছেন না। আপনার রক্ত আমি নিতে পারবো এতে রোগীর কোন ক্ষতি না হলেও আপনার ক্ষতির আশঙ্কা আছে।
বিশ্বাস করেন বন্ধুগণ, আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। রাত বিরাতে ঝড় বৃষ্টি অথবা শীত গ্রীষ্ম কতো সময়ে আমাকে এই কাজটি ব্যাস্ত রেখেছে মনের আনন্দ দিয়েছে বুঝাতে পারবোনা। আমার মায়ের বকুনি, স্ত্রীর তাচ্ছিল্য, কতো কথা শুনতে হয়েছিল! আহা এই সুখময় স্মৃতি ভুলতে পারবোনা। আল্লাহর দেওয়া জিনিস আল্লাহর বান্দাদের কাজে ব্যায় করার মাঝে কোন অহংকার নেই, কৃতিত্ব নেই। আছে কেবলই আত্মার প্রশান্তি।

আমি না হয় বাতিলের খাতায় চলে গেলাম, আপনাদের সকলের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, প্রবাহবান এই লাল ভালোবাসার ধারা কোন প্রকারেই যেন ব্যাহত নাহয়। আরো বেগবান হোক এই স্রোত।
আশেপাশের দোকানদার, পরিচিত বন্ধুমহলে যখনই কারো রক্তের দরকার হতো সবাই আমাকে বলতো, “একটু ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন কি?” তখনই নিজের কাজ নস্যি ভেবে ছুটে যেতাম এই কাজে।
এখন আমিতো অকেজো বুড়ো হয়ে গিয়েছি। গতকাল বাসায় ফিরে অনেক কেঁদেছি। আমার ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে জাহিদ হোসেন মঞ্জু সেও একজন ও পজিটিভ ব্লাড ডোনার। ও আমাকে বললো কান্না করবেন না, আপনি রক্ত দিতে নাহয় না পারেন, আগের মতোই রক্ত ম্যানেজ করার কাজ করে যান।
জাঝাকাল্লাহ খাইরান ফীদ্দার।
আপনাদের সাথে আমাকে রাখবেন।
সকল রক্তবন্ধুদের লাল সালাম।
মোশারফ মিলন
পৈতৃক নিবাস- নোয়াখালী
সোনাইমুড়ী, (নাটেশ্বর)
বর্তমান ঠিকানা- চকবাজার ঢাকা।
পেশাঃ ব্যবসায়ী (M.A pass)

roktobondhu.com স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের ওয়েবসাইট। স্বেচ্ছায় রক্তদাতাগণ রেজিস্ট্রেশন করুন।
রক্তদানের পরে ওয়েবসাইটে লগইন করে সর্বশেষ রক্তদানের তারিখ পরিবর্তন/আপডেট করে দিলে ঐদিন থেকে ১২০ দিন মানে আগামী ৪ মাস রক্তদাতার নাম কাটা অবস্থায় দেখা যাবে।
৪ মাস পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডোনারের নাম স্বাভাবিক ফন্টে দেখা যাবে।
প্রতিবার রক্তদানের পর লগইন করে অবশ্যই সর্বশেষ রক্তদানের তারিখ পরিবর্তন করে দিবেন।
N.B: নারী ডোনারগণ ফোন নম্বর গোপন রাখতে “নারী” সিলেক্ট করুন।
✅ বিস্তারিতঃ roktobondhu.com/details
অন্যান্য পোস্ট সমূহ
মেহেদির ১০৬ ও রক্তবন্ধু
Author: রক্তবন্ধু | 13 Oct 2025
১০৬ বারের রক্তদানের ভেতরে রক্তবন্ধু থেকে প্রথম ফোনের মাধ্যমে প্লাটিলেট দান। ২০২০ এর দিকে রক্তবন্ধু ওয়েবসাইটে আমি রেজিস্ট্রেশন করি। https://roktobondhu.com আমার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। দীর্ঘ...
টহলরত সেনা সদস্যের রক্তদান
Author: রক্তবন্ধু | 21 Jun 2025
টহলরত সেনা সদস্যের রক্তদান দিনাজপুরে জরুরিভাবে রক্ত দিয়ে এক প্রসূতি মায়ের জীবন বাঁচিয়েছেন টহলরত এক সেনা সদস্য। শুক্রবার (২০ জুন) রাতে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ...
পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই গভীর রাতে প্লাটিলেট দান।
Author: রক্তবন্ধু | 07 May 2025
রাত জেগে মুমূর্ষু রোগীকে ব্লাড দেয়ার অভিজ্ঞতা অনেক আছে তবে আজকে ঘটনাটা কাকতালীয় ভাবে অন্য দিনের থেকে আলাদা। ঘটনাটি ০৬/০৫/২০২৫ তারিখের। বেশ অনেকদিন ধরে...
Facebook Comments