ঝড় বৃষ্টির রাতে প্রথম রক্তদান

শেয়ার করুন:

জরুরী মুহূর্তে ঝড় বৃষ্টির রাতে রক্তদান
সাহসী মায়ের সাহসী মেয়ে

রাত ৯ টা, একটা কল পেলাম। সালাম দিয়ে বললেন, ❝ভাই ও+ ব্লাড লাগতো ১ ব্যাগ, দিতে পারবেন ম্যানেজ করে?❞
কথা বলে রোগীর বিস্তারিত জেনে বললাম, সিজার অপারেশন হবে তাও আবার ২য় বারের মতো, হিমোগ্লোবিনও কম! তো আগে থেকে ডোনার কনফার্ম করেন নাই কেন!
– ভাইয়া, আসলে আমি হেলথকেয়ার থেকে বলছি। রোগীর বাসা ঢাকায়, পঞ্চগড়ে বিয়ে হয়েছে এবং উনার স্বামী বাইরে আছেন। এইখানে তেমন কেউ নাই। তাই আগে ম্যানেজ করতে পারে নাই।

আমি সহ আমাদের রক্তিম♦️পঞ্চগড় (স্বেচ্ছায় রক্তদানের সংগঠন) এর স্বেচ্ছাসেবী ভাই বোনেরা মিলে এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী ভাই-বোনেরা মিলে খোঁজ শুরু করলাম।
রাত ৯ টা থেকে ১১ টা, ২ ঘন্টা যাবৎ কয়েকটা ডোনার এর সাথে কথা বলেছি। অনেকে সমস্যা দেখিয়েছে আবার অনেকে বলেছে রাতে নয়, আগামীকাল সকালে হলে দিতে পারবে।
রক্ত পাওয়া যায়নি বলে অপারেশন হচ্ছিল না। রক্ত লাগবে রাতেই। এদিকে ঝুম বৃষ্টি।
এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে যাই। সবসময় শুনি ও+, বি+ এগুলো সহজলভ্য, সহজেই পাওয়া যায়। আসলে সহজলভ্য মনে হলেও জরুরী মুহূর্তে অনেক সময় সেটাই পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে যায়।

অবশেষে রাত ১১ টা….
আমাদের একজন ভলান্টিয়ার Dustu Meye (ইসরাত জাহান নিপা) জানালেন তার কাছে একজন মেয়ে ডোনারের সন্ধান আছে। কিন্তু এতো রাতে এখন কি করা যায়! বৃষ্টিও পরছে।

আমি- হুম, ডোনার তো পাচ্ছিনা। ডোনার আছে কিন্তু রাতে দিতে পারবে না। আর ব্লাডটা এখনই লাগে, অপারেশন হবে। রোগীর জন্য ফোন দিয়েই যাচ্ছে তখন থেকে হাসপাতাল থেকে।
নিপা- ঠিক আছে, কথা বলে দেখি।
২-৩ মিনিট পর “আলহামদুলিল্লাহ! আমার এক বোন যাচ্ছে ব্লাড দিতে, সাথে আন্টিও যাচ্ছে। তুমি থাক।”
আমি- ঠিক আছে, আমি তো পঞ্চগড়ে নেই। আমি আমাদের সংগঠনের ভাইদের আসতে বললাম। উনারা থাকবেন আর বাসায়ও পৌঁছে দিবেন, কোনো সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ।

আমি- আন্টি (রক্তদাতার মা), নিপা আপু আপনার ফোন নাম্বারটা দিলো, আপনাদের রক্ত দিতে আসার কথা ছিল, আসতেছেন কি?

আন্টি- জ্বী, আমরা তো আসছি। এই যে হেলথকেয়ার এর নিচেই দাঁড়িয়ে আছি।

আমি- আচ্ছা, ওখানেই থাকেন, রোগীর আত্মীয় আপনাকে ভেতরে নিয়ে যাবে। আমি একটু পঞ্চগড়ের বাইরে আছি, ২জন ভাইকে আসতে বলেছি, উনারাও আসতেছেন।

আলহামদুলিল্লাহ!
এই ঝড়-বৃষ্টির রাতে এসে ছোটবোন তাসলিমা আক্তার সোনামণি (19) ১ম বারের মতো একজন সিজারিয়ান মা’কে স্বেচ্ছায় ও পজেটিভ লাল ভালোবাসা উপহার দিলেন।
এমনকি সাথে তার মা নিজে উপস্থিত থেকেই সাহস যুগিয়েছেন। বলাই যায় সাহসী মায়ের সাহসী মেয়ে।

রাত তখন ১১ টা পেরিয়ে.. !
বাইরে তখনও টুপটাপ বৃষ্টি….।

মহান আল্লাহর কাছে দোয়া কামনা করি, আল্লাহ উনাদের মঙ্গল করুন। সর্বদা বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করুন।
সেই সাথে ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানাই Dustu Meye (নিপা) কে এবং যারা পাশে ছিলেন Maruf Islam ও Md Nasir Hossain Niloy ভাইয়ের প্রতি।

আপনাদের এক ব্যাগ রক্তদান একটি রোগী ও একটি পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবে, এই হাসিটা অকৃত্রিম অতুলনীয়, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম দৃশ্য।

স্বেচ্ছায় রক্তদানে সমাজের সকলেই এগিয়ে আসছে, আপনিও এগিয়ে আসুন।

ভালোবাসা দিয়ে বাঁচাই প্রাণ, আসুন স্বেচ্ছায় করি রক্তদান।
মানবতার জয় হোক।

রুমন রহমান, রক্তিম পঞ্চগড়।
০২ সেপ্টেম্বর ২০২২।

শুধুমাত্র স্বেচ্ছায় রক্তদাতাগণ রেজিস্ট্রেশন করবেন।


শেয়ার করুন:

Facebook Comments