একসাথে ৩টি ইচ্ছে পূরণের গল্প

শেয়ার করুন:

একসাথে ৩টি ইচ্ছে পূরণের গল্প

মো. তাসনিমুল বারী নবীন

 

অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো প্লাটিলেট ডোনেট করার। সুযোগ মিলছিলো না কোনবার! আজ ৫ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে এক মায়ের জন্য প্লাটিলেট লাগবে। এফেরেসিস এর মাধ্যমে সেখানে টানে না। পাশেই হৃদরোগ হাসপাতালে টানে। আমরা ভাইয়া-ভাবী ফ্যামিলি আউটিংয়ে মিরপুর চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলাম। শ্যামলী ফিরতে বাজলো প্রায় সাড়ে ছয়টা৷ হৃদরোগ হাসপাতালে ৫ঃ৩০-৬ঃ০০টার পর এফেরেসিস করায় না। ঢাকা মেডিকেলে ৭টা লাস্ট টাইম। পিজি অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে সব সময় টানে। স্বস্ত্রীক রোগির ছেলে সহ রওনা হলাম। স্যাম্পল দেয়ার পর অপেক্ষার পালা৷ ও হ্যাঁ, বলে রাখি প্লাটিলেট দেয়ার এই সুযোগ অর্থাৎ রোগির সন্ধান দিয়েছেন রক্তবন্ধু ইরফান।
তো অপেক্ষার এক মূহুর্তে রক্ত সঞ্চালন বিভাগে রক্তবন্ধুর অপরাপর ভলান্টিয়াররা উপস্থিত হয়। এরই মধ্যে শিব্বির একজনকে পেলো! এক বাচ্চার জন্য এ পজিটিভ রক্ত লাগবে, ব্লাড ট্রান্সফিউশন রুমের সামনে ঘুরাঘুরি করছে! মৌরিনের অনেকদিনের ইচ্ছে রক্তদান করবে। কিন্তু রক্তদানের যোগ্যতার ওজন ছিলো প্রতিকূলে! আমাদের বিয়ের সময় ওদের বাড়িতে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের ক্যাম্পেইন করিয়েছিলাম! সেই থেকে ওর আগ্রহ আরোও প্রবল হয়ে উঠে। কবে রক্তদান করবে! এরই মধ্যে ওর ওজন ৪৮ কেজি হয়ে গিয়েছে! আর কে পায়! অনেক প্রতিক্ষার পর জীবনের প্রথম রক্তদান!

আমার প্রথম প্লাটিলেট দেয়া, মৌরিনের প্রথম রক্তদান করা।
আর তৃতীয় ইচ্ছে পূরণ হলো আমাদের একসাথে রক্তদান করা!
আজ একসাথে না হলে ওকে থ্যালাসেমিয়া সমিতি হাসপাতালে আগামীকাল রক্তদান করিয়ে আনবো এরকম একটা পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম। উপর ওয়ালা একসাথে সব পূরণ করে দিলো।

ও তো রোগির খোঁজ পেয়েই তখন থেকে বলে যাচ্ছিলো “তোমার কেমন লাগছে, আমার মনে তো লাড্ডু ফুটতেছে! আমাদের আজকের দিনটা পুরাই সফল”

সে রক্তদান করতে যাচ্ছে কেমন বোধ করছে জানতে চাইলে “আমাদের যেদিন বিয়ে হয়, সেদিন যখন তুমি আমাদের বাড়িতে আসলা, বর এসেছে শুনে যেমন এক্সাইটমেন্ট লাগতেছিলো ঠিক তেমন! ”

রক্তদান শেষে মৌরিনকে জিজ্ঞেস করলাম প্রথম রক্তদান করে কেমন খুশি লাগছে?

সে শুধু আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানালো। কৃতজ্ঞতা সেই রোগির ছেলের প্রতিও, যার জন্য মৌরিনেরও সুযোগ হলো, একজন গরীব রোগি তার বাচ্চার জন্য ইন্সট্যান্ট রক্ত পেয়ে গেল।

রাত পৌনে ১২টা, আমরা নিরাপদে ফিরে ঘরে ফিরলাম।

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়া’লার।

পান্না, হাসান মাহমুদ সহ অনেকে এসেছিলেন, সহযোগিতা করে, সময় দিয়ে পাশে থেকেছেন। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


শেয়ার করুন: