আমার প্রথম রক্তদান

শেয়ার করুন:

আমার প্রথম রক্ত দানের গল্প

কারমাইকেল কলেজে অনার্স প্রথমবর্ষে ভর্তি হওয়ার পর কলেজের বাঁধন রক্তদান সংগঠনের মাধ্যমে প্রথম বার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করেছিলাম। রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ। অনেকেই যাকে গরুর রক্ত বলে আখ্যায়িত করেন সেই গ্রুপ! মাঝে মাঝেই বাঁধনের ভাইয়ারা বি পজেটিভ গ্রুপের রক্তের চাহিদা নিয়ে আসতেন কিন্তু দেওয়ার সাহস করতে পারি নি। কয়েকবার তো সাহস করার পরও দিতে পারিনি। এইভাবে দোলাচলের মধ্যে ১ম ও ২য় বর্ষ অতিবাহিত করলাম। দিনটি ছিল পহেলা জানুয়ারি। মেসের পক্ষ থেকে ক্রিকেট খেলার আয়োজন হয়েছিল। সারাদিনে তিনটি ম্যাচ খেলেছিলাম। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি। রাতে তাসের আড্ডা। আনুমানিক রাত ১০/১১টায় খবর আসলো বন্ধুর ভাবী খুবই অসুস্থ। পেটে বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে। প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসতেছে। জরুরী রক্তের প্রয়োজন তবে রোগীর রক্তের গ্রুপ জানা নেই। সাথে সাথে আমরা বিভিন্ন গ্রুপের কয়েকজন রক্ত দাতা মেডিকেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম। দর্শনা মোড় থেকে রোগীর অ্যাম্বুলেন্সে করে মেডিকেলের দিকে রওনা দিলাম। রোগীর রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে দেখা গেলো বি পজেটিভ। আমরা একই গোয়ালের গরু। রোগীর রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ শোনা মাত্রই আমার হার্ট বিট বেড়ে গেল। কোনো দিন রক্ত দিইনি ভিতরে একটা অজানা ভয় কাজ করতে লাগলো। মাঝে মাঝে মনে হতে লাগলো এখান থেকে এক দৌঁড়ে পালিয়ে যাই! অবশেষে মনে পাহাড় পরিমান সাহস সঞ্চয় করে রক্ত দানের বেডে শুয়ে পড়লাম। তখন মনে রাজ্যের ভয়, হার্টবিট দ্বিগুণ। নিডল প্রিক করা হলো প্রায় চার মিনিটের মধ্যে ব্যাগ ভর্তি। ভয়ে টেনশনে এই চার মিনিট আমার কাছে তখন চারঘণ্টার সমান ছিল। বিশ্রাম নিয়ে উঠে পানি খেয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত তিনটা বাজে। সেই রাতে আর ঘুমানোর সুযোগ হয়নি।

আরমান আলী
এডমিন, বিরামপুর ব্লাড ব্যাংক।

শুধুমাত্র স্বেচ্ছায় রক্তদাতাগণ রেজিস্ট্রেশন করবেন।


শেয়ার করুন:

Facebook Comments