গভীর রাতে শুধু প্লাটিলেট নয়, সংকটে সহযোগিতাও করলেন তারা

শেয়ার করুন:

পরশু রাতের ঘটনা। আমি এনামে যাই প্লাটিলেট দেওয়ার জন্য এবং সময় রাত সাড়ে ১২টা কি ১ টা হবে সম্ভবত। ছোট ভাই Ruman Ahmed মেসেজ দেয়, ভাই আমি আসতেছি হসপিটালে আপনি থাকেন।

আমি স্যাম্পল দিয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করতেছিলাম। কিছু সময়ের মধ্যেই হাজির হয়, সাথে দেখি ছবির এই আঙ্কেল কে। জিজ্ঞেস করলাম আমাকে সময় দিতে আসলে নাকি তুমিও প্লাটিলেট দিতে আসছো?

জিজ্ঞেস করতেই বলল- ভাই দিতে আসছি। রোগীর প্লাটিলেট কাউন্ট মাত্র ৫০০০। তাই আর না এসে থাকতে পারিনি। কথা বলতে বলতে আমার প্রসেস সব ওকে হয়, আমার ডোনেশন শুরু হয়ে যায়।

একটা সময় এফেরেসিস রুমে এসে লোকটি বলে টাকার সংকট। মানে এফেরেসিস করাতে যে খরচ টা লাগে সেটা পুরোটা নেই। মাত্র ১০ হাজার টাকা আছে। কিন্তু টাকা লাগবে টোটাল ২৯৭২০ টাকার মত। এর মধ্যে ক্রসমেস খরচ ডিউ রাখা যাবে। এফেরেসিস এর টাকা ডিউ হবে না, পুরোটা ক্যাশ পেমেন্ট করতে হবে।

উনার ভাই ক্যাশ নিয়ে আসতেছেন, কিন্তু আসতে আসতে সকাল হবে। কি করব আমরা সবাই ভাবতে লাগলাম। এর মধ্যেই আমি যে রোগীকে প্লাটিলেট দিচ্ছি ওই রোগীর ভাইয়ে বন্ধু বললেন আমি কিছু দিতে পারব ৪/৫ হাজারের মতো।

রোমান কে জিজ্ঞেস করলাম তোমার কাছে আছে? বলল ভাই আছে। রোমান দিল ১৩ হাজার আর রকেট, বিকাশ করে টাকা ম্যানেজ করে পেমেন্ট করে দিল এফেরেসিস এর জন্য।

যখন টাকা ম্যানেজ হচ্ছিল না রোগীর বাবা কপাল চাপরাচ্ছিলো। টাকার জন্য প্লাটিলেট টা টানানো যাচ্ছে না। আমি তখন উঠতেও পারতাম না। আমার এফেরেসিস চলছিল। তখন লোকটার কি কান্না!

যদিও ওই আঙ্কেল এবং রোমানের টাকাটা রোগী দিয়ে দিয়েছে পরে, কিন্তু ওই মূহুর্তে টাকাটা নিজেদের থেকে ম্যানেজ করতে না পারলে কি হতো আল্লাহ ভালো জানে।

আমার প্লাটিলেট টানানো শেষ হয়ে গেলে বিদায় নিই। রোগীর লোকের গাড়ি ছিল। আমাকে ড্রপ করে দিয়ে যায় বাসায়। তখন ভোর ৪ টা। আমার পর রোমান দেয়। ও সকালে হসপিটাল থেকে বের হয় ৬.৩০ এ। সারা রাত না ঘুমানো আবার সকালেই ডিউটিতে, যদিও আমি ২ ঘন্টা সময় পেয়েছিলাম ঘুমানোর, রোমান সেটাও পায় নি।

ছেলে গুলো এত কষ্ট করে মানুষের পাশে দাঁড়ায় আর সাভারে কিছু জানোয়ার আছে যারা মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় রক্তের ব্যবসা করে আরেক জনের নাম বিক্রি করে।

রোমান ভালোবাসা নিস ভাই।

– হাসান মাহমুদ।

 


শেয়ার করুন:

Facebook Comments