কেন ৪ মাস পর রক্ত দিবেন, ৩ মাস পর নয়?

শেয়ার করুন:

প্রশ্ন : কেন ৪ মাস পরপর রক্তদান করা উচিত, ৩ মাস পর নয় ?

(এখানে পুরো ব্যাগ রক্ত দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। যারা এফেরোসিস এর মাধ্যমে শুধু প্লাটিলেট দেন তাদের কথা ভিন্ন। শুধু প্লাটিলেট হলে তারা ১৫-৩০ দিন পর রক্ত/প্লাটিলেট দিতে পারেন। প্লাটিলেট সংক্রান্ত বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করে পড়ে নিতে পারবেন)

উত্তর : একজন মানুষের শরীরের মোট ওজনের ৮% রক্ত দেহে থাকে।

শরীরের রক্ত সাধারণত দুই ধরনের উপাদান দ্বারা গঠিত।

১. রক্ত কোষ (Blood Cell)
২. রক্তরস (Plasma)

রক্তকোষ আবার তিন ধরণের উপাদানে গঠিত :
১. লোহিত রক্ত কণিকা (Red Blood Cell – RBC)
২. শ্বেত রক্ত কণিকা (White Blood Cell)
৩. অণুচক্রিকা (Platelet)

এছাড়া রক্তে হিমোগ্লোবিন থাকার ফলে রক্ত লাল রঙের দেখায়। হিমোগ্লোবিনের কাজ রক্তের মাধ্যমে কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করা।

* লোহিত রক্ত কণিকা (RBC) বাঁচে ৯০-১২০ দিন।
* শ্বেত রক্ত কণিকা (WBC) বাঁচে ১৩-২০ দিন।
* অণুচক্রিকা (Platelet) বাঁচে ৮-৯ দিন।

এই নির্দিষ্ট সময় পর রক্তের কোষগুলো মরে গিয়ে নতুন করে আবার তৈরি হয়।

এজন্য একবার রক্তদান করার পর শরীরে যে পরিমাণ কোষ এর ঘাটতি দেখা দেয়, তার সবগুলো পূরণ হতে সময় লাগে প্রায় ৩-৪ মাস।

যার ফলে একজন রক্তদাতা ৪ মাস পর পর রক্তদান করা উচিত। রক্তের কোষগুলো পরিপক্ক না হওয়া অবস্থায় রক্তদান করলে ডোনারের শরীরে যেমন কোষের ঘাটতি দেখা দেয়, ঠিক তেমনি রক্ত গ্রহীতাও পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্তের উপাদান পায় না। ফলে অপরিপক্ক রক্ত রোগির শরীরে ১০০% উপকারে আসে না এবং রোগীকে দ্রুতই আরোও রক্ত নিতে হয়। এতে অর্থেরও অপচয় ঘটে। ৪ মাস আগে রক্ত দিলে রোগী ১ ব্যাগ রক্ত পেলো ঠিকই কিন্তু রোগীর পুরোপুরি উপকার হলো না। উপরন্তু এটা রক্তদাতার জন্যও ক্ষতির কারণ হতে পারে।

৩ মাস পর ঘনঘন বা “নিয়মিত ৩ মাস পর” কিংবা ৩ মাসের কম সময়ে রক্ত দিলে ডোনারেরও ক্ষতি হয়ে যেতে পারে এমনকি রক্তদাতা স্থায়ী ভাবে রক্তদানে অক্ষম হয়ে যেতে পারেন। ব্যাঘাত ঘটলে রক্তদাতা হয়ে যেতে পারেন নিজেও একজন রক্তশূন্যতার রোগী! তখন উল্টো তারই রক্ত নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে! 

roktobondhu || রক্তবন্ধু

রক্তদান হোক নিয়ম মেনে। এমনিতেই  আমাদের দেশে রক্তদাতা কম। অনেকে রক্তদান করতে চায় না, অনেকে ভয় পায়। অনিয়ম করে রক্তদান করে রক্তদাতা অসুস্থ হলে রক্তদানের দেখাদেখি উৎসাহিত না হয়ে বরং ভয়ে অনেকে রক্তদান থেকে পিছিয়ে যাবে!

এজন্য একজন ডোনারের নিয়ম মেনে কমপক্ষে ১২০ দিন পর অর্থাৎ ৪ মাস পরপর রক্তদান করা উচিত।  ৩ মাস পরপর নয়
এতে রোগী এবং রক্তদাতা উভয়েরই মঙ্গল। রোগীও সার্বিকভাবে উপকৃৃত হলো, রক্তদাতাও রক্তদানের অনেক উপকার পেলো।

১২০ দিন বা ৪ মাসের আগে রক্তদান করলে রক্তদাতার শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে যা রক্তদাতাকেই রক্তশূন্যতায় ভোগাতে পারে। অপরদিকে ৪ মাস পরপর রক্তদান করলে শরীরের বোনম্যারো উজ্জীবিত হয় এবং নতুন রক্তকণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়।

যদিও বাইরের অনেক দেশে ৩ মাস পরপর রক্তদান করে, আমাদের দেশের তথা এই অঞ্চলের আবহাওয়া ও জলবায়ু এবং আমাদের খাদ্যাভ্যাস, জীবনাচরণ প্রভৃতি কারণে ৪ মাস পরপর রক্তদান করা উচিত এবং শুধু প্লাটিলেট হলে মাসে একবার অর্থাৎ ৩০ দিনে একবার দেয়াই উত্তম।

তবে  খুব বেশি এমার্জেন্সি হলে, হঠাৎ রক্তের প্রয়োজনে রক্তদাতা একেবারেই পাওয়া না গেলে ৩ মাস,  কিংবা সাড়ে তিন মাসেও দিতে পারেন।  তবে সেটা রেগুলার না, হঠাৎ দু’একবার। ৪ মাসের কমে “রেগুলার” করা যাবে না। এমার্জেন্সি হলেও এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার শারীরিক অবস্থা, স্বাস্থ্য  অনেক ভালো হতে হবে, হিমোগ্লোবিন পয়েন্ট বেশি  (স্বাভাবিক) থাকতে হবে। প্রয়োজনে চেক করে নিতে হবে।

মনে রাখবেন, একবার পুরোব্যাগ রক্তদান করলে ১২০ দিন আগে প্লাজমা, প্লাটিলেট কিছুই দিতে পারবেন না। আপনার ভুল সিদ্ধান্তে, নিয়ম না মেনে রক্তদান করে আপনি অসুস্থ হলে অন্য রক্তদাতারাও নিরুৎসাহিত হয়ে যাবে।

শুভ হোক আপনার রক্তদান
হাসবে রোগী, বাঁচবে প্রাণ।

স্বেচ্ছায় রক্তদাতাগণ রেজিস্ট্রেশন করুন roktobondhu.com
মনে রাখার মতো সহজ একটি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। প্রতিবার রক্তদানের পর ওয়েবসাইটে লগ ইন করে রক্তদানের তারিখ আপডেট করে দিন।

বিস্তারিত জানতে roktobondhu.com/details পড়ে নিন।

আমরা রক্তবন্ধু, রক্তের সম্পর্ক গড়ি


শেয়ার করুন:

Facebook Comments