বাংলাদেশ থেকে রক্ত পাঠানো
Author: রক্তবন্ধু | 30 Sep 2021
২০০৩-০৪ এর দিকের কথা।
পজিটিভ ব্লাড গ্রুপ পাওয়া-ই তখন খুব কষ্টকর, আর নেগেটিভ তো আকাশের চাঁদ। ভৈরবের বিভিন্ন অলি-গলি আর গ্রামে-গ্রামে ঘুরে বিভিন্ন চা-স্টল আর দোকানের সামনে বসে বসে ব্লাড গ্রুপিং করতাম, আর রেজিস্টার খাতায় লিখে রাখতাম।
তখন রোগীর লোককে সাথে নিয়ে খাতা থেকে লিস্ট ধরে ধরে ঐ গ্রুপের সম্ভাব্য রক্তদাতাদের বাড়িতে বা দোকানে গিয়ে অনুনয়-বিনয় করে রাজি করাতাম। রোগীর লোকের কান্না-কান্না চেহারা দেখে অনেকেই মানা করতে পারত না। একবার ত এমনও হয়েছে- সারাদিন ঘুরে একটা এবি পজিটিভ ম্যানেজ করতে পারছিলাম না। তো সারাদিন ঘুরার পর রোগীর ছেলে শেষ-মেষ আমার বন্ধু রাজীব দত্তের পায়ে ধরে ফেলেছে সত্যি সত্যি, যদিও রাজীব তারপর ও রক্ত দেয়নি- কারণ সে খুব ভয় পেত। আর আমাকে দেখলেই পালিয়ে পালিয়ে থাকত হৃষ্ট-পুষ্ট রাজীব।
তার মধ্যে একদিন একটা এ-নেগেটিভ এর রিকুয়েস্ট আসলো। তো রোগীর লোককে সাথে নিয়ে খাতার লিস্ট ধরে ধরে গিয়ে উপস্থিত হলাম ভৈরবের জগন্নাথপুর গ্রামের তাতারকান্দিতে। এক দোকানদার ভাইকে হাতে-পায়ে ধরে রাজি করাইলাম।
কিন্তু রোগীর লোক তখন কি বলে জানেন ?
ব্লাড নাকি লাগবে মাদ্রাজে ! আরে বলে কি ? মাদ্রাজে গিয়ে কি ব্লাড দেওয়া সম্ভব নাকি ? সে তখন তার রোগীর সব কাগজ-পত্রের ফটোকপি দেখাচ্ছে। আর বলতেছে- ডোনারের নাকি মাদ্রাজ যাওয়া লাগবে না। এখান থেকেই ব্লাড ব্যাগে ভরে প্যাকেট করে দেওয়া সম্ভব। তারপর আবার মোবাইলে রোগীর সাথে কথাও বলিয়ে দিল।
তখন আমি একটা সিটিসেল নাম্বার-০১১০৬২৩১৯ ব্যবহার করতাম। রোগী আবার ডাক্তারের সাথে কথা বলিয়ে দিল। ডাক্তার হিন্দি আর ইংরেজি মিশিয়ে আমাকে বুঝিয়ে দিল ব্লাড-ব্যাগ কিভাবে প্যাকেট করে দিতে হবে।
এর পরের ঘটনা খুব সহজ। আনোয়ারা হাসপাতালে ব্লাড ড্র করা হল ডোনারের শরীর থেকে। রক্তদাতাকে পর্যাপ্ত রেস্ট নিয়ে আর পানি খাইয়ে রিক্সা করে দিলাম। তারপর রোগির লোককে সাথে নিয়ে বাজার থেকে ব্লাড-ব্যাগের চেয়ে ২ সাইজ বড় একটা প্লাস্টিকের টিফিন বক্স কিনলাম সাদরুল মামার দোকান থেকে। তারপর গেলাম এবাদ মিয়ার বরফ মিলে। কিন্তু গিয়ে দেখি বন্ধ। ও আজকে তো রবিবার। বাধ্য হয়ে ফেরিঘাট পলতাকান্দা মাছের বাজারের পাশে যে বরফ মিল আছে, সেখান থেকে মাত্র দশ টাকা দিয়ে অনেক বড় একটা বরফ খন্ড কিনলাম। তারপর এটাকে একটা পলিথিনে ভরে আচ্ছামত হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কুচি-কুচি করলাম। এরপর ফার্মেসী থেকে বড় একটা কটন এর প্যাকেট কিনলাম। কটন পুরাটা খুলে কাথার মত বিছিয়ে দিলাম টিফিন বক্সের মধ্যে। তার উপর প্রায় অর্ধেকের মত বরফ কুচি ঢেলে এর উপরে ব্লাড ব্যাগটা রেখে তার উপরে আবার বরফ কুচি দিয়ে ডানে-বায়ে উপরে-নিচে সবটুকু বরফ কুচি ঢেলে দিলাম। তারপর কটন দিয়ে ব্লাড ব্যাগটা ঢেকে দিলাম। সবশেষে টিফিন বক্সের ঢাকনা দিয়ে ঢেকে একেবারে সীল-গালা করে দিলাম। ব্যস, ঐ ডাক্তারের নির্দেশ মত এটা এখন খুব সাবধানে কোন রকম নাড়াচাড়া না করে আস্তে-আস্তে নিয়ে গেলেই হবে।
পরদিন রোগীর লোক মাদ্রাজ থেকে কল দিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে বলল- রোগী একটু পর অপারেশন থিয়েটারে ঢুকবে, তাকে ব্লাড-ব্যাগ টা পুশ করা হয়েছে। তার জন্য যেন আমরা সবাই দুয়া করি।
শেষ খবর পাওয়া গিয়েছিল- রোগীর অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছিল। সুস্থ হয়ে সে দেশে ফিরে এসেছিল।

অন্যান্য পোস্ট সমূহ
মেহেদির ১০৬ ও রক্তবন্ধু
Author: রক্তবন্ধু | 13 Oct 2025
১০৬ বারের রক্তদানের ভেতরে রক্তবন্ধু থেকে প্রথম ফোনের মাধ্যমে প্লাটিলেট দান। ২০২০ এর দিকে রক্তবন্ধু ওয়েবসাইটে আমি রেজিস্ট্রেশন করি। https://roktobondhu.com আমার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। দীর্ঘ...
টহলরত সেনা সদস্যের রক্তদান
Author: রক্তবন্ধু | 21 Jun 2025
টহলরত সেনা সদস্যের রক্তদান দিনাজপুরে জরুরিভাবে রক্ত দিয়ে এক প্রসূতি মায়ের জীবন বাঁচিয়েছেন টহলরত এক সেনা সদস্য। শুক্রবার (২০ জুন) রাতে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ...
পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই গভীর রাতে প্লাটিলেট দান।
Author: রক্তবন্ধু | 07 May 2025
রাত জেগে মুমূর্ষু রোগীকে ব্লাড দেয়ার অভিজ্ঞতা অনেক আছে তবে আজকে ঘটনাটা কাকতালীয় ভাবে অন্য দিনের থেকে আলাদা। ঘটনাটি ০৬/০৫/২০২৫ তারিখের। বেশ অনেকদিন ধরে...
Facebook Comments