ও নেগেটিভ ডোনার আমি !
Author: রক্তবন্ধু | 14 Nov 2020
ও নেগেটিভ ডোনার আমি !
ক্লাস নাইনে প্রথম জানতে পারলাম আমার রক্তের গ্রুপ। কেন জানি ঐ সময় থেকেই ব্লাড ডোনেট করার মারাত্মক ইচ্ছা আমার। আমি কিন্তু ইনজেকশনের মারাত্মক ভয় পাই অথচ ব্লাড দেয়ার ইচ্ছে আমার শতভাগ। স্কুলে একদিন ব্লাড গ্রুপিংয়ের ক্যাম্প বসলো। ১০ টাকা দিয়ে ব্লাডগ্রুপ জানা যাবে। আমি ঐ ভাইয়াদের কাছে গিয়ে বললাম আমার ও নেগেটিভ ব্লাড। আমি মানুষকে রক্ত দিতে চাই। কীভাবে দিবো?
প্রথমে দুইজন ভাইয়া হাসলো তারপর বললো আরেকটু বড় হও ১৮ বছরের পর থেকে তুমি রক্ত দিতে পারবে। শুরু হলো আমার অপেক্ষা… ১৮ বছরের জন্মদিনটা পার হওয়ার পর থেকে আমি পাগল হয়ে গেলাম রক্ত দেওয়ার জন্য। টিভি স্ক্রিনে রক্ত লাগবে বলে কোনো নাম্বার দেখলে সাথে সাথে ফোন দিতাম। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আমি নিজে গিয়ে নাম দিয়ে রেখে এসেছিলাম ও নেগেটিভ লাগলেই যেন আমাকে ফোন দেয়। কিন্তু কেউ ডাকলো না।
একদিন ভোর চারটের সময় একজন ফোন দিয়ে বললো ব্লাড লাগবে। আমাদের কাছে রিক্সা ভাড়ার টাকাটাও ছিলোনা। হাসবেন্ড সহ আমি তখনই বের হয়ে যাই। মিরপুর ১ থেকে হেঁটে ১০-এ গ্যালাক্সি হাসপাতালে গিয়ে তিন ঘণ্টা বসে ছিলাম রক্ত লাগেনি। লোকটা জোর করে আমার হাতে পাঁচশো টাকার একটা নোট দিলো। আমি নতুন বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে টাকাটা বাচ্চাটার হাতে গুঁজে দিয়ে চলে এলাম।

প্রথম রক্তদান
তারপর থেকে অনেকদিনের অপেক্ষায় প্রথম ভালোবাসা দান করেছি ১৫ বছর বয়সী একটা ফুটফুটে হবু মাকে। কি যে একটা শান্তি সেদিন পেয়েছিলাম তা বলে বোঝানো সম্ভব না…
তারপর ২য় বার রক্তদান…
ব্রেইন টিউমারের বাচ্চাকে রক্তদান করতে গিয়ে আমাকে খুব ভয় লাগছিলো। বাচ্চাটাকে দেখলাম কোলে নিলাম আমার অর্তিসার (আমার মেয়ে) গায়ের গন্ধ পেলাম। ডাক্তার নাকি বলেছে বাচ্চাটার ব্রেনের টিউমারটা খুব সেনসেটিভ জায়গায়। পুরোটা তুলে আনতে গেলে মারা যেতে পারে। বাচ্চাটার মা কাঁদছিলো। আমার মনে হচ্ছিলো প্রথমবার রক্ত দেওয়ার কথাটা। প্রথমবার রক্ত দেওয়ার সাতদিন পর শুনলাম মা বাচ্চা দুজনেই মারা গেছে। এই বাচ্চাটার আল্লাহ না করুক যদি কিছু হয় আমি হয়তো আর কখনো রক্ত দেওয়ার সাহস পাবোনা।

আমার দ্বিতীয় রক্তদান
বাচ্চাটার অপারেশন চলছিলো আর আমার শুধু মনে হচ্ছিলো আমার মেয়ে অর্তিসা অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে।
আলহামদুলিল্লাহ অপারেশন ভালো হলো। অপারেশন শেষ হলে তবেই ওখান থেকে ফিরেছিলাম।
এরপর ৩য় রক্তদান..
এক বড় আপু। তার শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরিই হয়না। একদমই রক্তশূন্যতা। আমি যখন রক্ত দিতে গেলাম তখন থেকেই আমার হাতটা চেপে ধরে ছিলেন। যতক্ষণ আমার ব্লাড চলছিলো ততক্ষণই উনি নিজেই আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছিলেন এমনকি মাঝে মাঝে এসি চলা রুমেও বারবার ফাইল দিয়ে পাখার মতো বাতাস করছিলেন। সেই বোনটা তারপর থেকে আজও আমাকে সপ্তাহে মিনিমাম চারদিন ফেন দিয়ে খবর নেয়।
আলহামদুলিল্লাহ রক্ত দিয়ে রক্তের একজন বড় বোন পেয়েছি।
৪র্থ রক্তদানঃ ১৪/ নভেম্বর /২০২০
রক্ত দিতে গিয়ে দেখি আমার ব্লাড প্রেশার কম। রোগী নিজে আমার বারবার খবর নিচ্ছিলেন। উনি ক্যান্সারের পেশেন্ট। আমার বিপি কম বলে উনি আমার জন্য ডিম, গ্লুকোজ, স্যালাইন নিজে হাতে আমাকে দিচ্ছিলেন। উনার স্ত্রীও আমাকে অনেক আদর করছিলেন। তারপর প্রথমদিন কোনোভাবেই বিপি ঠিক হলোনা ব্লাড দেওয়ার জন্য। তারপর পরদিন মানে আজ আবার গেলাম। এবং অবশেষে…

চতুর্থবার
“হ্যাপি ব্লাড ডোনেটিং” ❤️
এই ছিলো আমার ছোট্ট গল্প রক্ত দানের।
সাদিয়া মল্লিক। মিরপুর,ঢাকা। মডারেটর-সোনার বাংলা ব্লাড ফাউন্ডেশন। নিজ জেলাঃ ঝিনাইদহ
অন্যান্য পোস্ট সমূহ
মেহেদির ১০৬ ও রক্তবন্ধু
Author: রক্তবন্ধু | 13 Oct 2025
১০৬ বারের রক্তদানের ভেতরে রক্তবন্ধু থেকে প্রথম ফোনের মাধ্যমে প্লাটিলেট দান। ২০২০ এর দিকে রক্তবন্ধু ওয়েবসাইটে আমি রেজিস্ট্রেশন করি। https://roktobondhu.com আমার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। দীর্ঘ...
টহলরত সেনা সদস্যের রক্তদান
Author: রক্তবন্ধু | 21 Jun 2025
টহলরত সেনা সদস্যের রক্তদান দিনাজপুরে জরুরিভাবে রক্ত দিয়ে এক প্রসূতি মায়ের জীবন বাঁচিয়েছেন টহলরত এক সেনা সদস্য। শুক্রবার (২০ জুন) রাতে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ...
পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই গভীর রাতে প্লাটিলেট দান।
Author: রক্তবন্ধু | 07 May 2025
রাত জেগে মুমূর্ষু রোগীকে ব্লাড দেয়ার অভিজ্ঞতা অনেক আছে তবে আজকে ঘটনাটা কাকতালীয় ভাবে অন্য দিনের থেকে আলাদা। ঘটনাটি ০৬/০৫/২০২৫ তারিখের। বেশ অনেকদিন ধরে...
Facebook Comments