প্লাটিলেট দিয়ে হাসপাতালেই রাত কাটাতে হয়েছিলো
Author: রক্তবন্ধু | 05 Jul 2023

১৬ মে ২০২৩ইং, সময়টা সকাল থেকেই শুরু করি।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বসলাম টেবিলে, আম্মু নাস্তা তৈরি করতেছে, ততক্ষণে একটু বই নিয়ে বসলাম (রক্ত পরিসঞ্চালনের জানা অজানা খুঁটিনাটি, ফারহানা নিলা) ম্যাম এর লেখা একটা অসাধারন বই।
তারপর নাস্তা করলাম প্রস্তুতি নিয়ে অফিসের জন্য বের হলাম। যেহেতু প্রায় ১৬/১৭ দিন হলো প্লাটিলেট দিয়েছি সুতরাং রোগী খুঁজতেছিলাম।
হঠাৎ একজন প্লাটিলেট সহযোদ্ধা ভাইয়ের ফোন- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গরীব এক ভাই এর বউ এর জন্য A Positive প্লাটিলেট প্রয়োজন। কনফার্ম করলাম আমি দিবো, কিন্তু যেহেতু ওনাদের টাকার কিছুটা সংকট ছিলো ওনারা ঢাকা মেডিকেলে না নিয়ে প্রায় ২০০০ টাকা কমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি) থেকে নিবেন। আমার দিকে থেকে কিছু চিন্তা না করেই অফিস শেষে করে প্লাটিলেট দিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিই।
সারাদিন অফিস শেষে রাত ৮:১৫ তে বের হই। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ঠিক ঐদিন ৭:৩০ মিনিট থেকে প্রচন্ড ঝড়-হাওয়া এবং সাথে বৃষ্টি। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। হাসপাতালের আসেপাশে আরো কয়েকটা এ+ ডোনার কে ফোন দিলাম কিন্তু ঐ সময়ে এবং পিজি হাসপাতালে তখন কেউই দিতে চাচ্ছিলো না।
আমার বাসা নারায়ণগঞ্জ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ২০কি.মি.+ হবে।
কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
পরে সাহস করে আল্লাহর নাম নিয়ে বের হয়ে পরলাম। যা হয় হবে, কথা দিয়েছি। আর ওনাদের খুব এমার্জেন্সি ছিলো, রোগীর প্লাটিলেট কাউন্ট মাত্র ১২ হাজার ছিলো।
প্রথমে অটো রিকশা, তারপর বাসে চড়ে কিছুদূর যাওয়ার পরে মনে হলো বাসে গেলে সারা রাত পার হয়ে যাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে, ওদিকে রোগীর লোক হাসপাতালে এসে বসে আছে।
নিলাম পাঠাও সার্ভিস। আলহামদুলিল্লাহ রাত ৯.১৫ তে বৃষ্টি আর রাস্তার ময়লা মেখে হাসপাতালে পৌঁছালাম। ওখানে গিয়ে যতটুকু পরিচয় দেওয়ার দিলাম যাতে তারাতাড়ি হয়। কিন্তু গিয়ে দেখি হাসপাতালের সার্ভার সমস্যা, ওনাদের হাতেও কিছু করার ছিলো না।
তখনি বুঝতে পেরেছি আজকে রাতে বাসায় যাওয়া পসিবল হবে না মনে হয়। সাথে সাথেই আম্মুকে ফোন দিয়ে বললাম আজকে আসবো না, রাতে এখানে থাকবো।
পরে স্ক্রিনিং, সিবিসির জন্য ব্লাড স্যাম্পল দিলাম। ১০ টার কিছু আগে পরে হবে সার্ভার ঠিক হলো কিন্তু লম্বা সিরিয়াল। তাও বলে যতটা আগে পেরেছি করেছি। সিবিসি সহ আলহামদুলিল্লাহ সব কিছুই ঠিক ছিলো। রাত ১১ টার দিকে শুরু হলো প্লাটিলেট প্রসেসিং এবং শেষ হয়েছে ১২ টা বাজে ৫ মিনিট বাকি।
কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। পরে চিন্তা করে পূর্বের অভিজ্ঞতা মোতাবেক হাসপাতালে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।
সুনসান নীরব হাসপাতালের চারপাশে, হাসপাতালের এক পাশে মর্গ। কিছুক্ষণ পরে পরে লাশের সাথে আত্মীয়-স্বজনদের কান্না ভেসে আসছে, ভয় এখন আর অতটা হয়না কারণ এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
যাই হোক- রাত অনেক হয়েছে, ৪৬ তম রক্তদান শেষ করে হালকা ঘুম ঘুম চোখে ব্লাড ব্যাংকের টেকনোলজিস্ট এর সাথে বিছানা করে সেখানেই রাত্রি যাপন করলাম।
দুই/আড়াই ঘন্টা ঘুম দিলাম, ঠিক ৫ টার সময় উঠে ফ্রেশ হয়ে নিজ গন্তব্য অভিমুখে যাত্রা করলাম।
বাসায় গিয়ে নাস্তা করে আবার সেই অফিস।
আলহামদুলিল্লাহ এভাবেই চলছে।

৩ জুলাই, ২০২৩, হাফ সেঞ্চুরি
অন্যান্য পোস্ট সমূহ

প্রথমবার রক্তদানের অভিজ্ঞতা
Author: রক্তবন্ধু | 27 Nov 2023
প্রথমবার রক্তদানের অভিজ্ঞতা রক্তবন্ধু কে চিনি অনেকদিন আগে থেকেই। মজার ব্যাপার হলো নবীন চাচ্চু রক্তবন্ধুর সাথে রিলেটেড তা প্রথমে জানতাম না। মনে অনেক ইচ্ছা...

জন্মদিনে ১৫ তম রক্তদান করে পাঠালেন সাইদুল
Author: রক্তবন্ধু | 14 Nov 2023
আলহামদুলিল্লাহ ১৫ তম এবি নেগেটিভ রক্তদান সম্পন্ন, রাজশাহীর এক থ্যালাসেমিয়ার রোগীকে। সময়: সকাল ৭:৩০ মিনিট সর্ব প্রথম শুকরিয়া আদায় করি মহান আল্লাহর প্রতি, যিনি...

এক নির্ঘুম রাতের প্লাটিলেট যোদ্ধার গল্প
Author: রক্তবন্ধু | 26 Aug 2023
এক নির্ঘুম রাতের প্লাটিলেট যোদ্ধার গল্প ২৪ আগস্ট, ২০২৩। দুপুর বেলায় রিকুয়েস্ট আসে এ পজিটিভ প্লাটিলেট প্রয়োজন। রিকুয়েস্ট পেয়ে সাড়া দেই, এবং আমাদের নতুন...