সোনালি হাতের মানব (ভিডিও সহ)
Author: রক্তবন্ধু | 11 Sep 2022

জেমস ক্রিস্টোফার হ্যারিসন
Man with the Golden Arm
জেমস হ্যারিসন। জন্ম অস্ট্রেলিয়া, ১৯৪০। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ভয়ংকর অসুস্থ হয়ে ৩ মাস হাসপাতালের বেডে পড়ে থাকতে হয় তাকে। এ সময় বিভিন্ন পরিচিত অপরিচিত মানুষ তাকে ১৩ লিটার রক্তদান করেন। এ ঘটনা তার মনে গভীরভাবে দাগ কাটে ও তাকেও রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করে।
রক্ত দেয়া শুরু করতেই ডাক্তাররা আবিষ্কার করেন হ্যারিসনের রক্তের আলাদা বিশেষত্ব। তার রক্তটা আর সবার থেকে আলাদা। তার রক্তের প্লাজমায় এমন এক বিশেষ উপাদান আছে যা শিশুদের “RH Disease” (আরএইচ ডিজিজ) নামক বিশেষ এক রোগের এ্যন্টিবডি হিসেবে কাজ করে। মাত্র ১৮ বছর বয়স থেকে হ্যারিসন শিশুদের জন্য রক্তদান করা শুরু করেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে রক্তদান করেছেন এই মহান মানুষ। অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি বছর হাজার হাজার শিশু “আরএইচ ডিজিজ” এর কারণে মারা যায়। আর বিশেষ এ রোগে শিশু মত্যুহার কমাতেই উঠেপড়ে লাগেন হ্যারিসন। ১৯৬৬ সালে প্রথম প্লাজমা দান করতে শুরু করেন তিনি। তখন আরএইচ রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু মত্যুর ঘটনা কমতে শুরু করে। শিশুদের এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় ভোগার পরিমাণও হ্রাস পায়। দিকে দিকে পৌঁছে যায় হ্যারিসনের কীর্তি গাঁথা।
পরবর্তীতে হ্যারিসনের রক্তের প্লাজমা ব্যবহার করে এ্যন্টিবডি ভ্যাকসিন তৈরী করা হয়, যা অস্ট্রেলিয়ার ২০লাখেরও অধিক শিশুকে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচাতে সহায়তা করে। এ কারণে অস্ট্রেলিয়া হ্যারিসনকে “Man with the golden arm” উপাধিতে ভূষিত করে। এত রক্ত দিয়েও কোন ক্লান্তি বা খারাপ লাগা নেই তার।

ছবি সম্পাদনাঃ সুব্রত দেব
নেগেটিভ মায়ের পজিটিভ বাচ্চা ডেলিভারির পর Rh Anti-D antibody নামক এই প্রতিরোধক ইঞ্জেকশান যদি মাকে না দেয়া হয় তবে পরবর্তী পজিটিভ বাচ্চা জন্মগতভাবে রক্তশূন্যতা, জন্ডিস নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে, এমন কি গর্ভে সন্তান মারাও যেতে পারে!
“RH Anti-D Antibody” প্রতিষেধক আবিষ্কারের পর থেকে ‘জেমস ক্রিস্টোফার হ্যারিসন’ প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর প্লাজমা (রক্তের একটি উপাদান) দান করতে থাকেন। এভাবে গত ১১ই মে, ২০১৮ তারিখে তিনি মোট ১১৭৩ বার প্লাজমা দান করেছেন। উনার প্লাজমা থেকে তৈরিকৃত প্রতিষেধকের মাধ্যমে আনুমানিক ২৪ লক্ষ শিশুর জীবন রক্ষা পেয়েছে।
অজস্র শিশুর জীবনের আশীর্বাদস্বরুপ পৃথিবীতে আসতে পেরে দারণ খুশি জেমস হ্যারিসন। মানবতার এই স্বর্ণোজ্জ্বল দৃষ্টান্তের স্মারককে লাল সালাম।
তার রক্ত/প্লাজমা দানের রেকর্ড গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে স্থান করে নিয়েছে।
DBC এর বাংলায় সম্পাদিত একটি ভিডিও
N.B: সোনালি হাতের মানব তাকে দেয়া উপাধি। সোনালি রক্ত বা গোল্ডেন ব্লাড সম্পর্কে জানতে পড়ুন

শুধুমাত্র স্বেচ্ছায় রক্তদাতাগণ রেজিস্ট্রেশন করবেন।
অন্যান্য পোস্ট সমূহ

দুর্লভ একটি রক্তের গ্রুপ- বোম্বে
Author: রক্তবন্ধু | 29 Dec 2022
দুর্লভ রক্তের গ্রুপ বোম্বে খুব সংক্ষেপে সাধারণ ব্যাখ্যায় বোম্বে ব্লাড গ্রুপ সম্পর্কে ধারণা নিন। মানুষের রক্ত দেখতে লাল বর্ণের হলেও এর গঠনগত পার্থক্য আসলে...

রক্ত পরিসঞ্চালন নিয়ে কিছু কথা
Author: রক্তবন্ধু | 20 Dec 2022
রক্ত পরিসঞ্চালন করার একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া / বিরূপ প্রতিক্রিয়া GVHD। নিকট আত্মীয় ডোনার হলে এটা হতে পারে। মৃত্যুর হার শতকরা ৯০ শতাংশের বেশী। Delayed...

স্ত্রীকে রক্তদান করা যাবে কি?
Author: রক্তবন্ধু | 19 Oct 2022
ধরুন আপনার স্ত্রী রক্তশূন্যতায় ভুগছে কিংবা সন্তান জন্মদানের আগে বা পরে প্রয়োজন হলো রক্তের। আপনি আপনার স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসেন। রক্তের গ্রুপ মিলে যাওয়ায় বা...