এক নির্ঘুম রাতের প্লাটিলেট যোদ্ধার গল্প

শেয়ার করুন:

এক নির্ঘুম রাতের প্লাটিলেট যোদ্ধার গল্প

২৪ আগস্ট, ২০২৩। দুপুর বেলায় রিকুয়েস্ট আসে এ পজিটিভ প্লাটিলেট প্রয়োজন। রিকুয়েস্ট পেয়ে সাড়া দেই, এবং আমাদের নতুন প্লাটিলেট ডোনার Suvho Ahmmad ভাই যার প্রবল ইচ্ছা প্লাটিলেট দিবেন, তিনি চাকুরীর সুবাদে নরসিংদীর ঘোড়াশালে থাকা সত্ত্বেও তাকে কনফার্ম করা হয়।
এর আগে ২২ বার হোল ব্লাড দিয়েছেন এবং প্রথমবারের মতো প্লাটিলেট দিলেন, সব মিলিয়ে ২৩ তম রক্ত দান সম্পন্ন করলেন।

A+ প্লাটিলেট লাগবে বলার সাথে সাথেই তিনি দিতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। যেহেতু শিশু হাসপাতালে এফেরেসিস প্লাটিলেট টানানোর মেশিন নাই সেক্ষেত্রে বাহির থেকে টানিয়ে নিয়ে যেতে হয়।

রোগীর বাবা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল থেকে টানানোর সিদ্ধান্ত নেন। রাত ৮ টার সময় ডোনার সহ হাসপাতালে হাজির হলাম। আমাদের সিরিয়াল ৫ নাম্বার, মোট রিকুজিশন ছিলো ৭/৮ টা, সব মিলিয়ে রাত যে হাসপাতালে কাটাতে হবে তা বোঝার বাকি নেই। যাই হোক কি আর করার! অপেক্ষা করতে করতে ভোর ৫.৩০, আমাদের সিরিয়াল আসলো, টানাতে টানাতে ৬ :৩০ এর মতো বাজে। শেষ করে রোগী প্লাটিলেট নিয়ে হাসপাতালে আর ডোনার তার গন্তব্যে।

পুরোটা সময় ডোনার এর সঙ্গী হিসেবে সাথে ছিলাম আমি
মোঃ মেহেদী হাসান মুমিন, (A+) নারায়ণগঞ্জ।
মোঃ জাকারিয়া, (A+) ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট।
মোঃ রাসেল, (A+) সাভার।

ডোনারকে সময়-সঙ্গ দেওয়ার জন্য একত্রিত হওয়া। ডোনার যেহেতু নতুন অর্থাৎ প্রথমবার প্লাটিলেট দিচ্ছেন।

সেই সাথে ছোট আকারে A+ প্লাটিলেট ডোনারদের একটা মিলনমেলা হয়ে গেলো।

রোগীটা ঢাকার অধিকাংশ নিয়মিত প্লাটিলেট দাতাদের পরিচিত। মুরসালিন, বয়সটা ৯/১০ হলেও দীর্ঘ দুই-আড়াই বছর ধরে ক্যান্সার এর সাথে যুদ্ধ করছে।
এখন পর্যন্ত অগণিত (৪০+) ডোনারের প্লাটিলেট নিয়ে প্রতিনিয়ত জীবন যুদ্ধের সাথে লড়াই করে দিন পার করছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের গুটিকয়েক সরকারী হাসপাতালেই এফেরেসিস করানো যায়। এছাড়া প্রাইভেট যে হাসপাতালগুলোতে এফেরেসিস করানো যায় সেগুলো তুলনামূলক অনেক ব্যয়বহুল।
কিট সংকট এর কারণে ২/১ টা হাসপাতালে কিট থাকলেও তারা নিজেদের হাসপাতালের ভর্তি রোগী ব্যতীত বাহিরের রোগীকে সহসা দিচ্ছে না।

সেই দিক থেকে কিট থাকায় সরকারী হাসপাতালের বাহিরের রোগীদেরও নিয়মিত প্লাটিলেট এফেরেসিস সুবিধা দিয়ে আসছে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল, এজন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একটা ধন্যবাদ দিতেই হয়।

কিট সংকট, মরণব্যাধী ক্যান্সার এর প্রকোপ সামলাতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে সেই সাথে আরেক মহামারী ডেঙ্গুর হানা, সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অবস্থা ভয়াবহ।

সবশেষে ধন্যবাদ জানাতে হয়, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট মোঃ আরিফ ভাইকে, যার নির্ঘুম রাতের ডিউটিতে দৈনিক কম-বেশি অনেক রোগী প্লাটিলেট পেয়ে থাকেন।

 

মোঃ মেহেদী হাসান মুমিন, A+

নারায়ণগঞ্জ।

শুধুমাত্র স্বেচ্ছায় রক্তদাতাগণ রেজিস্ট্রেশন করবেন।


শেয়ার করুন: