থ্যালাসেমিয়া ও সন্তান গর্ভধারণ
Author: রক্তবন্ধু | 31 Jan 2021
থ্যালাসেমিয়ায় সন্তান জন্মদান
ডা. গুলজার হোসেন, রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ
জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।
থ্যালাসেমিয়া একটি জন্মগত রক্তরোগ। বংশপরম্পরায় এই রোগ প্রবাহিত হয়। এতে আক্রান্ত ব্যাক্তির রক্তে ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন তৈরি হয়। এ কারণে অকালে রক্তের লোহিতকণিকা ভেঙে যায়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি রক্তস্বল্পতাসহ নানা সমস্যায় ভোগেন। তবে নিয়মিত সঠিক চিকিৎসায় ও নিবিড় তত্বাবধানে থাকলে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগী স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত নারীর মা হতে কোনো বাধা নেই। তবে সুস্থ সন্তান প্রসব করতে হলে তাকে একটি সমন্বিত আন্তবিভাগীয় চিকিৎসা ও পরিচর্যার মধ্যে থাকতে হবে। থ্যালাসেমিয়া ঠেকাতে বিবাহপূর্ব স্ক্রিনিংয়ের বিকল্প নেই।
মা যদি থ্যালাসেমিয়া মাইনর বা ট্রেইট বা শুধু বাহক হন, তাহলে তার তেমন কোনো শারীরিক ঝুঁকি নেই। বাবাও থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না, সেটা অবশ্য জেনে নেওয়া জরুরি।

মা ও বাবা উভয়ে বাহক হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি শতকরা ২৫ ভাগ। আর থ্যালাসেমিয়ার বাহক হওয়ার ঝুঁকি শতকরা ৫০ ভাগ।
মা যদি থ্যালাসেমিয়া মেজরের রোগী হয়ে থাকেন, আর বাবা যদি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকেন, তাহলে ধরে নেওয়া হয় সব সন্তানই থ্যালাসেমিয়া বাহক হবে। কেউই থ্যালাসেমিয়া মেজরে আক্রান্ত হবে না। এ ক্ষেত্রে মূলত মায়ের স্বাস্থ্য, গর্ভস্থ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও নিরাপদ প্রসব নিয়েই থাকবে মূল ভাবনা।
থ্যালাসেমিয়া মেজরে আক্রান্ত নারীর গর্ভধারণ হতে হবে পরিকল্পিত। গর্ভধারণের কমপক্ষে ছয় মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। যারা নিয়মিত রক্ত পরিসঞ্চালন করে থাকেন, তাদের রক্তে আয়রনের আধিক্য থাকে। সে ক্ষেত্রে গর্ভধারণের আগেই ঔষুধের মাধ্যমে রক্তের অতিরিক্ত আয়রন কমিয়ে স্বাভাবিক মাত্রায় আনতে হবে। আয়রনের আধিক্য শরীরের হরমোন নিঃসরণকারী গ্রন্থিগুলোয় কিছু সমস্যা তৈরি করে। ফলে ডায়াবেটিস, হাইপোথায়রয়েডিজম, শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া ইত্যাদি সমস্যা তৈরি হতে পারে। এমনকি বন্ধ্যত্বের সমস্যাও হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদে রক্তশূন্যতা থাকায় হার্ট ফেইলিউর ও কার্ডিওমায়োপ্যাথি হতে পারে। এসব সমস্যা রোগীর গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসবে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই আগে থেকেই এই সমস্যাগুলো শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞর পাশাপাশি হরমোন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের সমন্বিত পরামর্শ নিতে পারলে ভালো।
গর্ভধারণের পর নিয়মিত নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। প্রয়োজনে প্রতি মাসে মা ও গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে৷ হিমোগ্নোবিন এমন মাত্রায় রাখতে হবে, যেন গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত না হয়।
গর্ভাবস্থায় আয়রন শোধনের প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মোতাবেক নিরাপদ ওষুধ সেবন করতে হবে।
কার্ডিওমায়োপ্যাথি, ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়েডিজম, অস্টিওপোরসিস থাকলে গর্ভাবস্থায় তীব্রতা বেড়ে যায়। ফলে ভ্রূণের স্বাস্থ্য ব্যাহত হতে পারে। এদিকেও নজর দিতে হবে।
থ্যালাসেমিয়া রোগীর ফলিক আ্যাসিডের ঘাটতি থাকে। গর্ভাবস্থায় এই ঘাটতি আরও বেড়ে যেতে পারে। এর কারণে শিশুর জন্মগত মেরুরজ্জু ও স্নায়ুর ত্রুটি হতে পারে। তাই আগে থেকেই সঠিক মাত্রায় ফলিক এসিড খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় শিশুর নিয়মিত বায়োমেট্রিক প্রোফাইল পরীক্ষা করা উচিত। দরকার হলে ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি মাসে একবার অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করতে হবে।
অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে থ্যালাসেমিয়ার রোগীর স্বাভাবিক প্রসবে বাঁধা নেই৷ তবে অস্থির গঠনে সমস্যা থাকলে প্রসব জটিলতা দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্তও নিতে হতে পারে।
অন্যান্য পোস্ট সমূহ
Diego
Author: রক্তবন্ধু | 07 Nov 2024
ডিয়েগো ব্লাড গ্রুপ এর নাম শুনেছেন কেউ? রক্তের গ্রুপের (ব্যাতিক্রম এন্টিজেনের) শেষ নাই! আমরা আসলে মেজর ABO সিস্টেমে বাকী গুলো "গোনায়" ধরি না! যদিও...
কীভাবে বুঝবেন রক্তশূন্যতায় ভুগছেন?
Author: রক্তবন্ধু | 19 Mar 2024
কীভাবে বুঝবেন রক্তশূন্যতায় ভুগছেন? আপাত দৃষ্টিতে রক্তশূন্যতাকে খুব বড় কোনো রোগ বলে মনে না হলেও, যে কোনো বড় অসুখের শুরু হতে পারে এই রক্তশূন্যতা...
প্রসঙ্গঃ ডেঙ্গু ও প্লাটিলেট
Author: রক্তবন্ধু | 26 Jul 2023
দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এতে মৃত্যুর তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের সব রেকর্ড। বিশেষজ্ঞরা...
Facebook Comments