চাকুরির ইন্টারভিউ ছেড়ে রক্তদান

শেয়ার করুন:

চাকুরির ইন্টারভিউ ছেড়ে রক্তদান

২৩ জানুয়ারি বিকেল ৩-৪টার দিকে রক্তশূন্যতার এক রোগীর জন্য ও নেগেটিভ রক্তের রিকুয়েস্ট আসে আমাদের সাভারের ভলান্টিয়ার রক্তবন্ধু রাকিবের কাছে। সেটা নিয়ে রক্তবন্ধুর একান্ত এডমিন প্যানেলের গ্রুপে আলোচনা হয়।
রক্ত লাগবে মিরপুর-২ এ। রক্তবন্ধুর আরেক এডমিন রক্তবন্ধু মতিনের কাছে ও নেগেটিভ রক্তদাতার সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি যেখানে থাকেন জামগড়া (ফ্যান্টাসি কিংডম) এলাকাতেই ডোনার থাকেন।

ডোনারের সাথে যোগাযোগ করা হলে পরদিন ২৪ তারিখ রক্তদান করতে রাজি হলেন তিনি।

ঘটনাক্রমে ২৪ তারিখে তার চাকুরির ইন্টারভিউ ছিলো। তিনি ইন্টারভিউ দিতে একটি গার্মেন্টসে যান।

পরদিন রোগীর ছেলে ফোন দিলে রক্তদাতা জানালেন “ভাই আমার স্মরণই ছিলো না। আমি তো ইন্টারভিউ দিতে চলে এসেছি”

ভলান্টিয়ার মতিন ভাই ডোনারকে ফোন করে একটু রাগ করেই বলে ফেলেছিলেন ❝তোমার ভাইভা সেটা আগে বলবানা! তুমি রাজি হয়েছিলে বলেই আর ডোনার খোঁজা হয় নি। রোগী হাসপাতালে।
রক্তদাতা- ভাই, এখন কি করবো?
মতিন- যা ভালো মনে করো

রক্তদাতা ভাবলেন যদি রোগীটা মারা যায় রক্তের অভাবে! তিনি ভাইভার জন্য আর অপেক্ষা না করে দ্রুতই ফিরে আসেন।

সমস্যা হলো তিনি দীর্ঘদিন থেকে চাকুরিবিহীন। যাওয়া আসার ভাড়া পর্যন্ত তার কাছে নেই। বিষয়টি তিনি আমাদের এডমিন মতিনের সাথে শেয়ার করেন। চাকুরি চলে যাওয়ার পর অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। যদিও এখন প্রতারকরা ভাড়া দাবি করে তা পেয়ে ফোন বন্ধ রাখার ব্যবসা চালাচ্ছে, কিন্তু ট্রাস্টেড ভলান্টিয়ারের ট্রাস্টেড ডোনার হওয়ায় রোগীর ছেলের সাথে যোগাযোগ করে শুধুমাত্র যাওয়া আসার ভাড়া বাবদ ২০০ টাকা পাঠানো হয়।

তিনি রওনা হলেন দুপুর ১২টায়। আশুলিয়া রোডে অনেক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। সকালে, দুপুরের খাবারের সময়ে এবং গার্মেন্টস ছুটির পর প্রচন্ড ভীড় থাকে। রক্তদাতা দুর্ভাগ্যবশত দুপুরের জ্যামে পরে যান।

এদিকে রোগীর ছেলে মতিন ভাইকে কল করে বলেন ❝আমরাও চলাচল করি। রোডঘাট কি চিনি না? জামগড়া – সাভার থেকে মিরপুর আসতে কতো সময় লাগে জানা আছে।
(রোগীর ছেলে ভেবেছিলো দুই’শ টাকা মেরে দিয়েছে)
মতিন ভাই উত্তর দেন- দেখুন আমি তাকে চিনি। সে ওরকম ছেলে না। সে অবশ্যই যাবে। আমার সাথে কথা হয়েছে।

ডোনার গাড়ির শব্দে ফোন রিসিভ করতে না পারায় এরই মধ্যে রোগীর লোক আবার কল করে মতিনভাইকে রুক্ষভাবে বলেন “আপনার ডোনার কই? ডোনার তো আসলো না। ডোনার দিবেন বলে আমি অফিস মিস করে মা’কে নিয়ে হাসপাতালে আসছি।”

এরপর মতিন ভাই রক্তদাতার সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন তিনি মিরপুর-১ মাজারের কাছাকাছি আছেন।

এইবার মতিন ভাইয়ের কথা বলার একটু সুযোগ হলো!
তিনি রোগীর ছেলেকে বললেন- “আপনি বললেন আপনার মা’কে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন অফিস মিস করে, মায়ের চিকিৎসা করাতে অফিস মিস করে এসেছেন বলে আপনি রাগ করছেন, আর আমার ডোনার চাকুরির ইন্টারভিউ ছেড়ে রক্তদান করতে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাবে।”
উল্লেখ্য- শুরু থেকেই রোগীর ছেলে রাফ ভাবে কথা বলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু যার রেফারেন্সে রক্তের চাহিদা আসে তিনিও একজন ভলান্টিয়ার এবং রোগীর লোক পরিচিত বলেই….

অতপর রক্তদাতা পৌঁছালেন, রক্তদান করলেন। রোগীর ছেলে মতিন ভাইকে রুক্ষ আচরণের জন্য ভুল স্বীকার করলেন।

চাকুরির ইন্টারভিউ ছেড়ে রক্তদান

ফেরার সময় আবারও জ্যাম!!
রক্তদাতা রাত ৯ঃ৩০ এর দিকে বাসায় পৌঁছালেন।

এতোক্ষণ শুধু রক্তদাতা আর ডোনার বলেই যাচ্ছিলাম।
আসুন এই সুপার হিরোর নাম জেনে নিই।
তাঁর নাম রিয়াদ হোসেন। বাড়ি রংপুর।


শেয়ার করুন: