Polycythemia: রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যখন অস্বাভাবিক বেড়ে যায়

শেয়ার করুন:

Polycythemia: রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যখন অস্বাভাবিক বেড়ে যায়

Poly অর্থ অনেক, বহু। রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমান স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে গেলে, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বহুগুণে বেড়ে গেলে তাকে পলিসাইথেমিয়া বলে।

‘অ্যানিমিয়া’ বা রক্তস্বল্পতা শব্দটির সঙ্গে আমরা কম-বেশ পরিচিত। কিন্তু ‘পলিসাইথেমিয়া’র সঙ্গে অতটা নয়। পলিসাইথেমিয়া হলো অ্যানিমিয়ার ঠিক উল্টো। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে সেটাকে অ্যানিমিয়া বলে। আর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে এটিকে বলে পলিসাইথেমিয়া।

ছেলেদের ক্ষেত্রে যদি হিমোগ্লোবিন ১৭.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৫.৫ গ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি হয়, তাহলেই একে পলিসাইথেমিয়া বলা হয়।

স্বাভাবিক, রক্তস্বল্পতা ও পলিসাইথেমিয়ায় হিমোগ্লোবিন অনুপাত

পলিসাইথেমিয়ার কারণ ও ধরণঃ

পলিসাইথেমিয়া মূলত দুই ধরনের। অস্থিমজ্জা বা স্টেম সেলের সমস্যার কারণে পলিসাইথেমিয়া হতে পারে।
একে বলে প্রাইমারি পলিসাইথেমিয়া বা পলিসাইথেমিয়া রুব্রা ভেরা।

অন্য কোনো অসুখের কারণে রক্তে লোহিত কণিকা ও হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে তাকে সেকেন্ডারি পলিসাইথেমিয়া বলা হয়।

আরেকধরণের পলিসাইথেমিয়া আছে৷ সেটা হলো রিলেটিভ পলিসাইথেমিয়া৷ অর্থাৎ আসলে কোষের সংখ্যা বাড়েনি কিন্তু রক্তরসের অনুপাতে রক্তকোষের সংখ্যা বেড়ে গেছে৷ অতিরক্তি ধূমপান , মদ্যপান, মূত্রবর্ধক ওষুধ ইত্যাদি কারণে রক্তরস কমে গিয়ে রক্তকোষের আনুপাতিক বৃদ্ধি হতে পারে।
ডেঙ্গুতেও রক্তরস বেরিয়ে গিয়ে রক্তে লোহিত কোষের অনুপাত বেড়ে যেতে পারে।

প্রাইমারি পলিসাইথেমিয়ায় নিয়মমাফিক চিকিৎসা নিলে অনেক দিন ভালো থাকা যায়। ৫ শতাংশ রোগী পরবর্তী সময়ে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। ২০-৩০ শতাংশ রোগী মাইলোফাইব্রোসিস নামের মজ্জার জটিল অসুখে আক্রান্ত হতে পারে। রক্ত বেশি ঘন হয়ে গেলে রক্তের প্রবাহ ধীর হয়ে যায়। তখন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদির আশঙ্কা বেড়ে যায়।

সেকেন্ডারি পলিসাইথেমিয়ার ক্ষেত্রে দায়ী রোগটির চিকিৎসা করালে পলিসাইথেমিয়াও ভালো হয়ে যায়।

বি.দ্র: খেলোয়াড় বা যে সব মানুষ পাহাড়ি অঞ্চলে থাকেন, তাঁদের হিমোগ্লোবিন বেশি হয়। যাঁরা তিব্বতে বাস করেন, তাঁদের হিমোগ্লোবিন সমতলের মানুষের তুলনায় বেশি। যদিও তিব্বতের মানুষদের ক্ষেত্রে এটা কিন্তু কোনও শারীরিক সমস্যা নয়। তবে কিছু সিস্টেমিক ডিজিজের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিন বেড়ে যায়। যেমন, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ এয়ারওয়ে ডিজিজ বা লাং ফাইব্রোসিস, যেগুলি শ্বসনতন্ত্রের কিছু গুরুতর রোগ কিংবা যে সব শিশুর হৃদ্‌যন্ত্রে ফুটো রয়েছে এবং সেখানে রক্ত বাঁ দিক থেকে ডান দিকের বদলে ডান দিক থেকে বাঁ দিকে বয়ে যায়, সেখানে এই সমস্যা দেখা যায়। যদি কারও এগুলির কোনটাই না থাকে, তা হলে চিকিৎসকেরা ধরে নেন সেই ব্যক্তির প্রাইমারি ব্লাড ডিসঅর্ডার রয়েছে।

এনিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতা হলে কিংবা থ্যালাসেমিয়া রোগীর হিমোগ্লোবিন কমে গেলে রোগীকে রক্ত দিতে হয়। আর পলিসাইথেমিয়া এর বেলায় ঠিক উল্টো! হিমোগ্লোবিন অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় রোগীর শরীর থেকে ( ব্লাড লেটিং করতে হয়) রক্ত ফেলে দিতে হয়!
এর প্রাথমিক চিকিৎসাই হলো ভেনিসেকশন বা শিরা থেকে রক্ত টেনে নিয়ে ফেলে দেওয়া। এই প্রক্রিয়াকে মেডিকেলের ভাষায় ফ্লেবোটোমি বলা হয়।

তবে এই রক্ত কাউকে দেয়া যাবে না। দিলে রক্ত গ্রহীতার ক্যান্সার হতে পারে। যদি সেকেন্ডারি পলিসাইথেমিয়া হয় অর্থাৎ অন্য কোন রোগের কারণে হিমোগ্লোবিন বেড়ে যায় তাহলে ক্যান্সারের ঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবুও এই রক্ত দেয়া অনুচিত বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা

রোগীর বয়স যদি অল্প হয় এবং হিমোগ্লোবিন যদি বেশি থাকে, তা হলে তার ফ্লেবোটেমি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় রোগীর শরীর থেকে রক্ত বার করে নেওয়া হয়, যতক্ষণ না হেমাটোক্রিট বা পিসিভি ৪৫-এর আশেপাশে হয়।

সপ্তাহে এক বা একাধিকবার এই রক্ত ফেলে দেওয়ার কাজটি করতে হয়। এ ছাড়া ওষুধও ব্যবহৃত হয়।

নির্ণয়ের উপায়:
সিবিসি পরীক্ষায় এটি ধরা পড়ে। হিমোগ্লোবিন ও পিসিভি বা হেমাটোক্রিটের মাত্রা দেখে রোগটি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা করা যায়। পরের ধাপে দেখতে হয় অন্য কোনো কারণে এটি হয়েছে কি না। এ ছাড়া টিউমার মার্কার পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম, হার্টের ইকোকার্ডিওগ্রাম, ইসিজি ইত্যাদি পরীক্ষা করার দরকার হয়। মজ্জার সমস্যার কারণে হয়েছে কি না, সেটা বুঝতে হলে বোনম্যারো পরীক্ষা এবং বিশেষ জিনের মিউটেশন দেখার জন্য সাইটোজেনেটিক পরীক্ষা করা হয়।

পলিসাইথেমিয়া হলে কি হয়ঃ
পলিসাইথেমিয়ায় রক্তকোষ বেড়ে গিয়ে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়৷ ফলে মাথা ধরা, শ্বাসকষ্ট, চোখে কম দেখা, চুলকানি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়৷ গরম পানিতে গোসল করলে গা বেশি করে চুলকায়।
পলিসাইথেমিয়ায় রোগীর চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। তাই এর নাম রুব্রা ভেরা। অবশ্য এশীয় মহাদেশীয় বাদামী ত্বকের রোগীর ক্ষেত্রে লাল হয়ে যাওয়ার বদলে কালো হয়ে যায়৷
এছাড়াও প্লীহা বড় হয়ে যায়, ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়, পেপটিক আলসার, জয়েন্টে ব্যথা ইত্যাদিও দেখা দিয়ে থাকে।
রক্তের ঘনত্ব বাড়তে থাকলে বিপদও বাড়তে থাকে। রক্ত ঘন হয়ে আস্তে আস্তে রক্তের প্রবাহ ধীর হয়ে যায়। স্ট্রোক, হার্ট এটাক ইত্যাদির সম্ভাবনা বেড়ে যায়৷
পলিসাইথেমিয়া, যা এরিথ্রোসাইটোসিস নামেও পরিচিত, মানে রক্তে লোহিত রক্তকণিকার উচ্চ ঘনত্ব। এটি রক্তকে ঘন করে তোলে এবং রক্তনালী এবং অঙ্গগুলির মাধ্যমে রক্তের ভ্রমণ পথ সংকুচিত করে ফেলে বা কম সক্ষম করে ফেলে।
পলিসাইথেমিয়াকে অনেক সময় পলিসিথেমিয়া বলা হয় বা পলিগ্লোবুলিয়া নামেও এটি পরিচিত৷
যদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পর্যাপ্ত রক্ত না পৌঁছায়, তা হলে বুকে ব্যথা কিংবা সেরিব্রাল স্ট্রোক হতে পারে। লাল রক্তকণিকা বেশি হলে পেটে আলসার, গাউট কিংবা কিডনি স্টোন হতে পারে। এ ছাড়াও পলিসাইথেমিয়ার রোগীর শেষ জীবনে লিউকিমিয়া কিংবা মায়েলোফাইব্রোসিস-এর মতো গুরুতর রক্তের সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে। লিউকিমিয়া হল ব্লাড ক্যানসার যা খুব তাড়াতাড়ি খারাপের দিকে চলে যেতে পারে।

লিউকেমিয়া বা লিউকিমিয়া হলো রক্ত বা অস্থিমজ্জার ক্যান্সার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর প্রধান লক্ষণ রক্তকণিকার, সাধারণত শ্বেত রক্তকণিকার অস্বাভাবিক সংখ্যাবৃদ্ধি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই রোগ সাধারণত জন্মগত নয়। ফলে কারও পলিসাইথেমিয়া থাকলে সেটা তাঁর সন্তানের মধ্যেও আসবে, এমন হয় না।

লক্ষণ সমূহ:
এই সমস্যায় লক্ষণগুলি খুব উল্লেখযোগ্য কিছু হয় না। মাথা ধরে থাকা, দপদপ করা, কান ভোঁ ভোঁ করা, মুখ লাল হয়ে থাকা, প্রচণ্ড রক্তচাপ, লিভার এবং স্প্লিন বেড়ে যাওয়া।

২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) পলিসাইথেমিয়া রুবরা ভেরা নির্ণয়ের জন্য কিছু শর্ত দিয়েছে। যেমন:
হিমোগ্লোবিন অথবা লাল রক্তকণিকা বেশি থাকা
অস্থিমজ্জায় ট্রাইলিনিয়েজ হিমাটোপয়েসিস দেখা যায়। ট্রাইলিনিয়েজ হিমাটোপয়েসিস হল সেই প্রক্রিয়া যেখানে তিন ধরনের রক্তকণিকা তৈরি হয় — প্লেটলেট(প্লাটিলেট), লাল রক্তকণিকা এবং শ্বেত রক্তকণিকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শরীরে জিনগত মিউটেশন জেএকে-২ মিউটেশন পাওয়া যাবে।

তা ছাড়া প্রাইমারি পলিসাইথেমিয়ায় এরিথ্রোপয়েটিন-এর (হরমোন যা অস্থিমজ্জাকে রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে) মাত্রা কম থাকে।

তথ্যসূত্রঃ
রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গুলজার রহমান, ঢাকা।
হেমাটোলজিস্ট ডা. শর্মিলা চন্দ্র, কলকাতা।

শুধুমাত্র স্বেচ্ছায় রক্তদাতাগণ রেজিস্ট্রেশন করবেন।


শেয়ার করুন: